![]() |
চ্যাং, চ্যাংগও, ঢোক, উড়কো, উলকো বা উফলা |
চ্যাং মাছের আকার ও গঠন
চ্যাং মাছের দেহ ল্যাটার মতো হলেও মাথা তুলনামূলকভাবে মোটা ও চওড়া। লম্বায় এটি সাধারণত খাটো হয়। মাছটির উপরের ঠোঁট থেকে দুটো ছোট শুঁড়ের মতো অংশ বেরিয়ে থাকে।
মাপ: সাধারণত ৭-৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হতে পারে।
পাখনা: শোল বা ল্যাটার মতো হলেও শ্রোণি পাখনা অত্যন্ত ছোট।
রঙ: বাসস্থান ও পরিবেশভেদে রঙ বদলাতে পারে। সাধারণত কালচে-সবুজ, বাদামি বা হালকা বাদামি হয়। মাথা ও পিঠের অংশ গাঢ় রঙের এবং লেজ ও পেটের অংশ অপেক্ষাকৃত হালকা। পিঠ ও লেজ পাখনার কিনারায় উজ্জ্বল কমলা, নীলচে বা কালো ফোঁটা দেখা যায়। এছাড়া, পায়ুর পাখনায় উজ্জ্বল নীল/কালো/সাদা রঙের দাগ থাকতে পারে।
বাসস্থান
চ্যাং মাছ সাধারণত ডোবা, নালা, পুকুরের অগভীর জল, বিশেষ করে কিনারার দিকে বেশি পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে, এমনকি নোংরা পানিতেও টিকে থাকে।
চ্যাং মাছের স্বভাব
চ্যাং মাছ মূলত শিকারী প্রকৃতির এবং নিচের দিকে অবস্থান করে:
জলাশয়ের কিনারায় জলের উপরে ঘাপটি মেরে থাকে।
শিকার ধরার দক্ষতা খুবই চমৎকার। মশা-মাছি বা উড়ন্ত পোকা কাছে এলে হঠাৎ লাফিয়ে মুখে পুরে ফেলে।
লাফিয়ে জল থেকে ডাঙায় উঠতে পারে এবং সেখান থেকে কিলবিল করতে করতে আবার পানিতে নেমে যেতে পারে।
বর্ষার সময় এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
জলের মধ্যে ছোট মাছ, চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকার করতে পছন্দ করে।
বিপদ বুঝলে গুলি ছুটে যেভাবে ছিটকে যায়, ঠিক সেভাবে পাথর বা পড়ে থাকা পাতা বা কাদার মধ্যে লুকিয়ে পড়ে।
পুরুষ মাছ বাচ্চাদের মুখের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে পারে বলে জানা যায়।
স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ার সময় পুরুষ মাছের নিচে উল্টে গিয়ে পেট উপরের দিকে রেখে সাঁতার কাটে।
চ্যাং মাছের জনপ্রিয়তা
চ্যাং মাছ বাজারে খুব বেশি জনপ্রিয় নয়, তবে গ্রামবাংলার দরিদ্র পরিবারের শিশুদের কাছে এটি আকর্ষণীয়।
শিশুদের হাতে ধরা সহজ হওয়ায় তারা হাত ছিপ দিয়ে চ্যাং মাছ ধরতে পছন্দ করে।
অনেক শিশু কাঁচের বোতল বা ছোট অ্যাকোয়ারিয়ামে এটি পোষে।
দরিদ্র পরিবারে চ্যাং মাছ রান্না করে খাওয়া হয়।
সদৃশ প্রজাতি
চ্যাং মাছের সাথে শোল, শাল এবং ল্যাটা মাছের বাচ্চাদের অনেকটা মিল রয়েছে। তবে চ্যাং মাছের মাথার অংশ বেশি চওড়া এবং ত্রিভুজাকৃতির হওয়ায় সহজেই আলাদা করা যায়।
সংরক্ষণের অবস্থা
চ্যাং মাছ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারলেও বর্তমানে এই মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এর কারণসমূহ:
প্রদূষণ: নালা ও ডোবার জলের গুণগত মান অবনতি হওয়া।
জলাশয় ভরাট: প্রাকৃতিক জলাশয় ধ্বংস হওয়া।
অতিরিক্ত শিকার: শিশুদের আকর্ষণীয় হওয়ায় অতিরিক্ত ধরা পড়া।
জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন: নতুন ধরনের শিকারী মাছ ও প্রাণীর আগমন।
উপসংহার
চ্যাং মাছ এক সময় গ্রামীণ জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া যেত, কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে এটি সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে এটি আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় জলাশয় সংরক্ষণ ও অতিরিক্ত শিকার রোধ করতে পারলেই এই মাছের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality