![]() |
ফলুই মাছ |
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
ফলুই মাছের আকৃতি প্রদীপের শিখার মতো সরু এবং ছোরার ফলার মতো দেখতে।
দৈর্ঘ্য: এই মাছ সাধারণত ১ ফুট পর্যন্ত বড় হয়, তবে অতীতে ২ ফুট লম্বা ফলুই পাওয়া যেত।
পাখনা:
পিঠের পাখনা ছোট ও লম্বাটে, মুখের প্রান্ত ও লেজপাখনার অগ্রভাগের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
শ্রোণি পাখনা এত ছোট যে খালি চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব।
পায়ুপাখনা এবং লেজপাখনা একসাথে মিশে গিয়ে একটি অভিন্ন ঝালরের মতো গঠন করে।
আঁশ ও রঙ: দেহে খুব ছোট আঁশ থাকে, তবে কানকোর উপরের আঁশ দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় বড়। গায়ের রং সাধারণত সাদা রূপালি থেকে নীলচে কালো হয়, পাশাপাশি দেহে তামাটে সবুজ আভা ও সূক্ষ্ম ধূসর বিন্দু দেখা যায়।
আবাসস্থল
ফলুই মাছ প্রধানত মিঠা পানিতে বাস করে। এটি পুকুর, খাল, নদী, খাঁড়ি, বিল ইত্যাদি জলাশয়ে পাওয়া যায়। তবে জলদূষণ ও জলাশয়ের পরিবর্তনের ফলে এর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
স্বভাব ও খাদ্য
ফলুই শান্ত প্রকৃতির মাছ এবং সাধারণত সন্ধ্যা ও রাত্রে খাদ্য সংগ্রহ করে। এরা ছোট মাছ, জলজ পোকামাকড়, শৈবাল ও অন্যান্য ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে।
খাদ্যমান ও বাজারমূল্য
যদিও ফলুই মাছের কাঁটা অনেক বেশি, তবু এটি অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে বেশ কদর রয়েছে। একসময় গ্রামবাংলার খাবারের তালিকায় এটি নিয়মিত থাকলেও, এখন এটি বেশ বিরল। ফলে এর বাজারমূল্যও তুলনামূলকভাবে বেশি।
সদৃশ প্রজাতি
ফলুই মাছের সাথে দেখতে অনেকটা চিতল মাছ (Chitala chitala)-এর মিল আছে। তবে পার্থক্য করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়:
চিতল মাছের গায়ে কালো গোল দাগ থাকে, যা ফলুই মাছের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
চিতল মাছ আকারে সাধারণত বড় হয়ে থাকে।
বর্তমান পরিস্থিতি
আগে নদী-খাল ও জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া গেলেও বর্তমানে ফলুই মাছের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জলদূষণ, অতিরিক্ত আহরণ এবং বাসস্থান ধ্বংসের কারণে এই মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। মৎস্যচাষের মাধ্যমে এই মাছ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো এটি আবার আগের মতো পাওয়া যাবে।
সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ
ফলুই মাছ সংরক্ষণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
জলাশয়ের সংরক্ষণ: নদী, খাল ও পুকুরগুলিকে দূষণমুক্ত রাখা দরকার।
নিয়ন্ত্রিত আহরণ: মাত্রাতিরিক্ত আহরণ বন্ধ করতে হবে।
কৃত্রিম প্রজনন: বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই মাছ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ফলুই মাছ একসময় বাংলার জলাশয়ে প্রচুর পাওয়া গেলেও বর্তমানে এটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর স্বাদ ও খাদ্যমান বিবেচনায় নিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যদি সঠিকভাবে জলজ পরিবেশ রক্ষা করা যায়, তবে আবারও এটি বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাবে।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality