![]() |
টেরাকোটা মন্দির 📍 পালপাড়া, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ |


রাজু বিশ্বাস
ব্লগার | লেখক |ছাত্র
📍 ভারত (India)
Blue Tick Approval
এখানে বিশেষভাবে রামায়ণের কাহিনী ফুটে উঠেছে, যেখানে রাম ধনুক হাতে রাবণ, কৃষ্ণভর্ণ এবং রাক্ষস সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও ফুল, পাতা ও ডালের নকশা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অলংকৃত রয়েছে। অন্যদিকে সামনের ও পেছনের দেওয়ালে টেরাকোটার ফলক ছড়িয়ে রয়েছে, যা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রমাণ বহন করে।
টেরাকোটা অলংকরণ:পালপাড়া মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ এর সূক্ষ্ম টেরাকোটা কারুকাজ। প্রবেশদ্বারের ডান, বাম এবং উপরের অংশে টেরাকোটার মনোরম শিল্পকর্ম দেখা যায়।
উল্লেখযোগ্য দৃশ্যসমূহ:
🏛️ রামায়ণ থেকে রাম-রাবণের যুদ্ধের চিত্রণ:
🏺 বাঁদিকে তির-ধনুক হাতে রামচন্দ্র।
🏺 ডানদিকে দশানন রাবণ যুদ্ধে প্রস্তুত।
🏺 রাবণের পাশে বিশালাকার রাক্ষস ও বানরসেনার সম্মুখযুদ্ধের দৃশ্য।
🏛️তোরণপথ অলংকরণ:
🏺 চারপাশে বহু দু'মুখো সাপ (বা ড্রাগন) খোদাই করা।
🏛️অন্য অলংকরণ:
🏺 প্রবেশদ্বার ও কার্নিসের নিচে ফুল-পাতার সূক্ষ্ম নকশা।
🏺পশ্চিম দেওয়ালের পশ্চাদভাগেও বহু টেরাকোটা ফুলের কাজ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
পালপাড়া মন্দিরের নির্মাণকাল নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও, এটি মুসলিম পরবর্তী যুগে নির্মিত বলে প্রতীয়মান হয়। মন্দিরের অভ্যন্তরের ছাদ গম্বুজাকৃতির হওয়ায় এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় মতে, এই মন্দির জনৈক গন্ধর্ব রায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়।
ইংরেজি ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত "List of Ancient Monuments in Bengal" গ্রন্থে এই মন্দিরের তৎকালীন মালিকরূপে বাবু কালীকুমার চৌধুরী-এর নাম উল্লেখ করা হয়।
বর্তমানে এই মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (ASI)-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত। সম্প্রতি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও আংশিক সংস্কারও করা হয়েছে যাতে তার ঐতিহাসিক গরিমা অটুট থাকে।
পালপাড়া মন্দির “প্রাচীন স্মারক ও পুরাতাত্ত্বিক স্থল এবং অবশেষ আইন, ১৯৫৮” ও সংশোধিত আইন ২০০০ অনুযায়ী “রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্মারক” হিসেবে সংরক্ষিত।
এই স্মারক ধ্বংস, অপসারণ বা পরিবর্তন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তির আওতায় পড়তে পারেন।
পালপাড়া মন্দির তার স্থাপত্য ও টেরাকোটা অলংকরণে সমৃদ্ধ হওয়ায় পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ। বাংলার স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দর্শনীয় স্থান হিসেবে এই মন্দির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এটি নদীয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীর অমূল্য নিদর্শন।
🚆 রেলপথে যাতায়াত:শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখার ট্রেনে চেপে সরাসরি পালপাড়া স্টেশন পর্যন্ত আসা যায়। শিয়ালদহ থেকে পালপাড়া স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। স্টেশনে নেমে পশ্চিম দিকে মাত্র ৫ মিনিট হাঁটলেই মন্দিরে পৌঁছানো যায়। মন্দিরটি দুর্গানগর তারকদাস বিদ্যামন্দিরের পাশে অবস্থিত।
🚗 সড়কপথে যাতায়াত: রানাঘাট শহর বা নদিয়া জেলার অন্য যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়কপথে গাড়ি করে পালপাড়া পৌঁছানো সম্ভব। রানাঘাট থেকে পালপাড়ার দূরত্ব খুব বেশি নয় এবং রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালো।
📅 ভ্রমণের পরামর্শ: বিশেষ করে বর্ষাকাল এড়িয়ে শীত বা বসন্তকালে মন্দির দর্শন করলে আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করা আরও সহজ হয়।
![]() |
পালপাড়া মন্দির |