
মৌরলা, মোরলা, মৌটি, ময়া
বৈজ্ঞানিক নাম: Amblypharyngodon mola (Hamilton)
স্থানীয় নাম: মৌরলা, মোরলা, মৌটি, ময়া
আকার ও গড়ন :
মৌরলা মাছ দেখতে লম্বাটে এবং দুপাশ চ্যাপ্টা। এর পেটের অংশ তুলনামূলকভাবে বেশি ঝোলানো থাকে। লম্বায় সাধারণত সাড়ে তিন ইঞ্চির মত হয়।
পাখনা ও রঙ:
মৌরলার পিঠপাখনা একটি, যা শরীরের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। এর লেজপাখনা সমান দু’ভাগে বিভক্ত। গুঁড়ো রূপোলি আঁশে ঢাকা জল-সাদাটে দেহের কারণে এটি সহজেই চেনা যায়। মাছটির দেহজুড়ে একটি ধূসর রূপালি মোটা দাগ থাকে, যা কানকোর প্রান্ত থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত।আবাসস্থল:
মৌরলা মাছ সাধারণত নদী, নালা, খাল, বিল ও পুকুরে পাওয়া যায়। বর্ষার সময় এরা ধানক্ষেতের পানিতেও ঢুকে পড়ে। জলাশয়ের গভীরতা ও গুণমানের ওপর নির্ভর করে এদের সংখ্যা ওঠানামা করে। এরা সাধারণত স্রোতহীন বা ধীরগতির জলে বেশি দেখা যায়।
স্বভাব:
মৌরলা মাছের স্বভাব সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অনেকের মতে, 'মোরলার এক পক্ষে ডিম আসে আরেক পক্ষে মারা যায়', অর্থাৎ এটি স্বল্পজীবী মাছ। ছোট পুকুর ও জলাশয়ে সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে, তবে জল দূষণের কারণে এদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এরা সাধারণত পৃষ্ঠদেশে বা মধ্য স্তরের পানিতে চলাচল করে।
খাদ্যাভ্যাস:
এরা মূলত শৈবাল, ছোট জলজ প্রাণী ও কণা জাতীয় খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে। মৌরলা মাছ জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য উপকারী, কারণ এটি পোকামাকড় ও অতিরিক্ত শৈবাল খেয়ে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মৌরলা মাছ আণুবীক্ষণিক প্লাঙ্কটন এবং ক্ষুদ্র পোকামাকড় খেতে বেশি পছন্দ করে।
অর্থনৈতিক ও পুষ্টিগুণ:
মৌরলা মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু এবং গ্রামীণ জনপদে এটি বেশ জনপ্রিয়। এটি প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ হওয়ায় মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার। এছাড়া, মৌরলা মাছ হাড়সহ খাওয়া যায়, যা ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও সহায়ক।
সদৃশ প্রজাতি:
মৌরলার সঙ্গে কাঠ-চাঁদা মাছের কিছু মিল রয়েছে, তবে কাঠ-চাঁদার তুলনায় মৌরলা আকারে ছোট ও গড়নে তুলনামূলক বেশি লম্বাটে। এছাড়া, মৌরলার তুলনায় কাঠ-চাঁদার আঁশ একটু মোটা হয় এবং শরীরের রঙ কিছুটা পার্থক্যযুক্ত।
সংরক্ষণ পরিস্থিতি:
পরিবেশগত দূষণ, জলাশয়ের সংকোচন এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের ফলে মৌরলা মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এদের রক্ষা করতে হলে জলাশয় সংরক্ষণ, অতিরিক্ত আহরণ নিয়ন্ত্রণ ও জল দূষণ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। গবেষকদের মতে, নিয়ন্ত্রিত চাষের মাধ্যমে মৌরলা মাছের সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন সম্ভব।
চাষাবাদ:
বর্তমানে মৌরলা মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রিত জলাশয়ে মৌরলা মাছ চাষ করলে এটি বাজারে ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে। এটি পুকুর ও ছোট জলাশয়ে সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে, তাই গ্রামীণ অঞ্চলের ক্ষুদ্র মৎস্যচাষিদের জন্য এটি লাভজনক হতে পারে।
উপসংহার:
মৌরলা মাছ কেবলমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি আমাদের জলজ বাস্তুতন্ত্রেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ক্ষুদ্র মাছের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা একে সংরক্ষণ করতে পারি। পাশাপাশি, নিয়ন্ত্রিত চাষের মাধ্যমে এটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality