ভুতো বেলে: বাংলার জলজ জীববৈচিত্র্যের এক দুর্লভ সম্পদ

ভুতো বেলে: বাংলার জলজ জীববৈচিত্র্যের এক দুর্লভ সম্পদ

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

ভুতো বেলে
  বাংলার জলাশয়গুলিতে প্রায়শই আমরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পাই, যেগুলি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অমূল্য সম্পদ। এমনই এক দুর্লভ মাছ হল ভুতো বেলে। বৈজ্ঞানিক নাম Eleotris fusca (Forster)। এটি দেখতে বেলে মাছের মতো হলেও এর দেহের আকার ও গঠন আলাদা। বাংলার মিঠে ও নোনা জলের জলাশয়গুলিতে এর বিচরণ হলেও বর্তমানে এটি দুর্লভ হয়ে উঠেছে। চলুন, এই মাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, বাসস্থান, স্বভাব, এবং পরিবেশগত গুরুত্ব সম্পর্কে জানি।

 ভুতো বেলের বৈজ্ঞানিক পরিচয়

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Eleotris fusca (Forster)
  • সাধারণ নাম: ভুতো বেলে
  • গোষ্ঠী: Eleotridae

 শারীরিক বৈশিষ্ট্য

  • আকার-গঠন:
    ভুতো বেলে মাছের গঠন বেলে মাছের মতো হলেও দেহটি তুলনামূলকভাবে কম লম্বা এবং মুখটি কম সরু। এদের নীচের চোয়াল বড় এবং ঠোঁটটি বেলের মতো পুরু নয়।
  • মাপ:
    প্রাপ্তবয়স্ক মাছের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।
  • পাখনা:
    • পিঠে দুটি পাখনা থাকে, প্রথমটি নরম এবং দ্বিতীয়টি অপেক্ষাকৃত বড়।
    • বুক পাখনার দৈর্ঘ্য মাথার সমান এবং লেজ পাখনা গোলাকার।
  • রঙ:
    ভুতো বেলের গায়ের রঙ কালচে লাল থেকে ঘন কালো। পিঠের দিকের রঙ হালকা এবং গায়ে একটি ফ্যাকাসে লাল আভা দেখা যায়। এদের চোখের দৃষ্টি ঝাপসা এবং দেখতে যেন ছানি পড়া।

 বাসস্থান ও স্বভাব

  • আবাস:
    ভুতো বেলে মূলতঃ খাঁড়ি ও নোনা জলের মাছ হলেও এটি নিম্নবঙ্গের মিঠে জলের নালা, ঝিল, এবং পুকুরেও পাওয়া যায়।
  • স্বভাব:
    • বড় মাছ সাধারণত জলাশয়ের তলায় পাথর বা জলজ ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
    • ছোট মাছ শিকার করে জীবনধারণ করে।
    • এরা খুব একটা ছটফটে স্বভাবের নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির থেকে লুকিয়ে থাকার প্রবণতা রয়েছে।

 ভুতো বেলের পরিবেশগত গুরুত্ব

ভুতো বেলে মাছের আবাস ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য একে স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে। এটি জলের নীচে অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে এর সংখ্যা বর্তমানে কমে যাওয়ায়, এটি পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

 ভুতো বেলের চিহ্নিতকরণ ও সদৃশ প্রজাতি

  • সদৃশ প্রজাতি:
    ভুতো বেলেকে অনেকেই বেলে, চ্যাং, বা ছোট ল্যাটার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। তবে এদের আলাদা বৈশিষ্ট্য হল:
    • রঙ আরও কালচে ও লালচে।
    • শ্রোণি পাখনা আলাদা, যা বেলের মতো একত্রিত হয়ে ‘কাপ’ তৈরি করে না।
    • পিঠ পাখনা দুটি ভাগে বিভক্ত।

     

    বর্তমান পরিস্থিতি ও দুর্লভতা

    ভুতো বেলে মাছ বর্তমানে খুবই দুর্লভ। জলাশয় দূষণ, বাসস্থান ধ্বংস, এবং অতিরিক্ত মাছ শিকার এদের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে। এদের সংরক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

    উপসংহার :ভুতো বেলে মাছ শুধু বাংলার জলজ জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ নয়, এটি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। এদের টিকে থাকার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জলাশয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। এই দুর্লভ মাছটি বাঁচানোর জন্য আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!