গজাল বা শাল মাছ: যে মাছটি চাষের পুকুরেও বিপদ ডেকে আনে

গজাল বা শাল মাছ: যে মাছটি চাষের পুকুরেও বিপদ ডেকে আনে

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

গজাল-বা-শাল-মাছ.jpg

গজাল বা শাল মাছ

 বৈজ্ঞানিক নাম: Channa marulius (Hamilton)
আরও পরিচিত নাম: গজাল, শাল মাছ

শাল মাছ (Channa marulius), যা 'গজাল' নামেও পরিচিত, আমাদের নদী, খাল ও পুকুরে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিকারী মাছ হিসেবে পরিচিত। এটি এক ধরনের প্রজাতি যা বর্তমানে দক্ষিণ ভারতে বিলুপ্তির পথে। চলুন, শাল মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

 আকার ও গড়ন : শাল মাছের শরীর লম্বাটে এবং শোল ও ল্যাটা মাছের মতো গড়ন। এটি বড় এবং শক্তিশালী শিকারী মাছ, যার মুখটি বড় এবং ধারালো দাঁতের সারি দিয়ে সাজানো। শাল মাছের মাথা সামনের দিকে চ্যাপ্টা ও সরু, চোখগুলো খুব বড় এবং নিটোল।
 
 মাপ: শাল মাছ সাধারণত প্রায় ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, তবে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি লম্বা এবং ৩০ কেজি ওজনের শাল মাছের কথাও শোনা যায়। বাংলার স্রোতহীন জলাশয়ে শাল মাছ ছাড়া এত বড় আকারের অন্য মাছ প্রায় নেই।
 
রঙ : শাল মাছের মাথা ও পিঠের অংশ গাঢ় ধূসর বা বাদামি হতে পারে, যেখানে পেটের অংশ হালকা বাদামি বা সাদা। শরীরের দুই পাশের গাঢ় কালো ছোপ দাগ পিঠ থেকে পেটের দিকে নেমে আসে। লেজ পাখনার গোড়ায় কালো চোখের মতো দাগ দেখা যায় যা এটিকে অন্য মাছের থেকে আলাদা করে। কিছু মাছের পিঠ, বুক ও অন্যান্য পাখনায় কমলা রঙের দাগও থাকতে পারে।
 
আবাস : শাল মাছ স্রোতহীন, গভীর জল যেমন নদী, খাল, বিল ও পুকুরে বসবাস করে। এটি সাধারণত জলের নিচের গাছপালার আশপাশে থাকতে পছন্দ করে।
 
স্বভাব : শাল মাছ একটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক শিকারী মাছ। ছোট মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, শামুক, ব্যাঙ, এমনকি সাপকেও এরা শিকার করে খায়। পুরুষ শাল মাছ নিজস্ব এলাকা দখল করতে চায় এবং প্রজননকালে খুবই হিংস্র হয়ে ওঠে। মেয়ে মাছ ৩৫০ থেকে ৩৫০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে, এবং পুরুষ মাছ ডিমের পাহারা দেয়। বাচ্চারা দ্রুত বাড়ে এবং এক বছরে প্রায় ২ ফুট লম্বা হয়ে যেতে পারে।
 
মূল্য: শাল মাছের মাংস অনেকের কাছে খাওয়ার জন্য জনপ্রিয় নয়, বিশেষ করে বড় শাল মাছগুলি অনেকের কাছে ভয়ঙ্কর মনে হয়। তবে গরীব মানুষরা একে খেয়ে থাকে।
 
সদৃশ প্রজাতি : শাল মাছ ছোট অবস্থায় লেজ পাখনার চোখের মতো দাগের কারণে অন্য মাছ যেমন শোল, ল্যাটা বা চ্যাং থেকে আলাদা করা যায়। বড় আকারের মাছের ক্ষেত্রে, এই দাগটি থাকতে নাও পারে, তবে শোল মাছের সঙ্গে এর পার্থক্য স্পষ্ট।
 
পরিস্থিতি : শাল মাছ অত্যন্ত শিকারী মাছ হওয়ায় চাষের পুকুর ও দীঘিতে এটি সাধারণত মেরে ফেলা হয়। এর কারণে, শাল মাছের সংখ্যা দক্ষিণ বাংলায় ক্রমশ কমে যাচ্ছে। মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত জলাশয়েও এটি খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
 
 সারাংশ: শাল মাছ একটি শক্তিশালী এবং প্রাকৃতিকভাবে আগ্রাসী শিকারী মাছ। তবে এই মাছের সংখ্যা বর্তমানে দ্রুত কমে যাচ্ছে এবং একে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। মাছ চাষের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ও সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপগুলির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!