![]() |
শোল মাছ |
শোল মাছ (Channa striatus) আমাদের দেশের মিঠে পানির এক অমূল্য রত্ন। একসময় গ্রামবাংলার পুকুর, বিল, দীঘি জুড়ে প্রচুর শোল মাছ দেখা যেত। কিন্তু আজ তা হারিয়ে যাওয়ার পথে। এই পোস্টে শোল মাছের গঠন, স্বভাব, আবাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
শোল মাছের দেহ নলাকার এবং সামান্য গোল। মাথাটি সরু এবং উপরদিক চ্যাপ্টা। মুখ বড় এবং নিচের চোয়াল উপরের চোয়াল থেকে সামান্য বড়।
- আকার: শোল মাছ সাধারণত ৩ ফুট পর্যন্ত বড় হতে পারে, যদিও বর্তমানে বাজারে ১.৫ ফুটের বেশি বড় শোল খুব কম দেখা যায়।
- পাখনা: পিঠ পাখনা কানকোর পেছন থেকে শুরু হয়ে লেজ পর্যন্ত চলে। পায়ু পাখনা পিঠ পাখনার তুলনায় ছোট।
- রং: মাথা ও পিঠ সবজে কালো বা কালচে রঙের হয়। পেটের অংশ হলুদে সাদা। পিঠ থেকে পেট পর্যন্ত কালো ছোপ দাগ দেখা যায়।
আবাসস্থল
শোল মাছ স্রোতহীন মিঠে পানির জলাশয়ে যেমন পুকুর, ডোবা, বিল এবং দীঘিতে থাকতে পছন্দ করে। কচুরিপানা বা জলজ উদ্ভিদে পূর্ণ জলাশয় এদের জন্য আদর্শ বাসস্থান।
স্বভাব ও খাদ্য
শোল মাছ একটি শিকারী মাছ। এরা ছোট মাছ, ব্যাঙ, পোকা-মাকড়, এমনকি নড়াচড়া করা প্রাণীদেরও দ্রুত গিলে খায়।
- বর্ষাকালে শোল মাছ প্রজননের জন্য পুরোনো জলাশয় ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
- স্ত্রী মাছ জলজ উদ্ভিদের মধ্যে গুহা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ থাকে এবং পরে উজ্জ্বল কমলা রঙ ধারণ করে।
বর্তমান পরিস্থিতি
একসময় প্রচুর শোল মাছ দেখা গেলেও বর্তমানে তা সংকটাপন্ন।
- অতিরিক্ত শিকার এবং চাহিদার কারণে শোল মাছের সংখ্যা দ্রুত কমছে।
- নব্বইয়ের দশকে ছত্রাকজনিত রোগে শোল মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল।
- বর্তমানে এদের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস হওয়ায় শোল মাছ আবার সংকটে।
বাজার মূল্য
শোল মাছের স্বাদ অতুলনীয় হওয়ায় এর বাজারে কদর অনেক বেশি। তবে সহজলভ্য না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক বেশি।
সংরক্ষণে করণীয়
শোল মাছ সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
- অতিরিক্ত শিকার বন্ধ করতে হবে।
- প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে।
- শোল মাছের প্রজননের সময় জলাশয়ে শিকার বন্ধ রাখা উচিত।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality