৭৬৩ বছরের ইতিহাসে নদীয়ার ‘বুড়ো মা’ পূজা | Ranaghat Buro Maa Puja History
personলালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
অক্টোবর ০১, ২০২৫
0
share
সাতশো তেষট্টি বছরের ইতিহাস ও কিংবদন্তির প্রত্যক্ষ এবং জীবন্ত সাক্ষী নদীয়ার ‘বুড়ো মা’। মা- তিনি সর্বজনেরই মা, তিনিই মা দুর্গা। কিন্তু বৈদিক বা পৌরাণিক দেবীসত্ত্বায় তিনি আর সীমাবদ্ধ নন; তিনি এখানে পরিব্যাপ্ত লোকজীবনের প্রাণকেন্দ্র।
নদীয়া জেলার প্রাচীন শহরে শর্মাপাড়ায় বহু প্রাচীন শর্মাবাড়ির আরাধ্যা দেবী ‘বুড়ো মা’। কোনো পারিবারিক সীমারেখা তাঁর ব্যষ্টিকে কোনোদিনই সঙ্কুচিত করেনি। পারিবারিক দেবী হয়েও তিনি প্রতিষ্ঠিত ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ে।
রাঢ়দেশ থেকে কবে যে রামকুমার চক্রবর্তী নামে এক তীর্থাভিলাষী ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ মায়ের আদেশ পেয়ে এই পূজার প্রবর্তন করেছিলেন, তা আজ আর সন-তারিখ মিলিয়ে খুঁজে বার করা সম্ভব নয়। তবে মোটামুটি হিসেব অনুযায়ী ১২৬২ খ্রিষ্টাব্দে এই ‘বুড়ো মা’-এর পূজা প্রবর্তিত হয়।
লোককাহিনী: একদিন নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রাজকার্যের প্রয়োজনে যাচ্ছিলেন ওই পথ দিয়ে। হঠাৎই তিনি দেখলেন লালপাড় শাড়িপরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা নদীর পাড়ে বসে আখ খাচ্ছেন। কে এই দেবীকন্যা? মুহূর্তে সেই মাতৃমূর্তি অদৃশ্য হয়ে গেল। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও অনুসরণ করে শর্মাবাড়িতে এসে দেখলেন মা দুর্গার হাতে সেই অবশিষ্ট আখের টুকরো। মহারাজ বুঝলেন, মা এখানে মৃন্ময়ী নন, চিন্ময়ী। এখানে দেবীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে ধনসম্পদে নয়, এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের অপার ভক্তির মহিমায়। ধর্মপ্রাণ ও মাতৃভক্ত মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই এগিয়ে আসেন দেবী পূজার সহায়তায়।
এই পূজার বাহ্যিক আড়ম্বর নেই, কিন্তু আচার-অনুষ্ঠান ও শাস্ত্রবিধি পুরোপুরি অনুসরণ করেই পূজা হয়, তাই এই পূজার স্থান সকলের আগে।
প্রতি বছর উল্টোরথের দিন নতুন পাটায় সিঁদুর দিয়ে প্রতিমা তৈরির শুভ কাজ শুরু হয়। তৈরি হয় একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা। তারপর শুভ চতুর্থী তিথিতে মাতৃপতিমাকে মৃত্তিকাবেদিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই একই বিধি দীর্ঘকাল ধরে অটলভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে।
রানাঘাট শহরে আরেকটি প্রাচীন পূজা আজও প্রচলিত। দক্ষিণপাড়াতেই ঘোষবাড়িতে সেই দুর্গাপূজা অব্যাহত রয়েছে। ঘোষবাড়ির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই পূজা তিনশ বছরেরও বেশি প্রাচীন।
✍️ যুগান্তর পত্রিকায় প্রনবেশ চক্রবর্তীর কলমে প্রকাশিত গবেষণামূলক সংবাদটি, বুধবার ২১ আশ্বিন ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ / ৮ অক্টোবর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality