ভারতের ক্রীড়াঙ্গন: অবক্ষয় ও সংকট bharater-krirangan-obokkhoy-o-songkot

ভারতের ক্রীড়াঙ্গন: অবক্ষয় ও সংকট bharater-krirangan-obokkhoy-o-songkot

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

ভারতের ক্রীড়াঙ্গন: অবক্ষয় ও সংকট
লেখক Orange Tick

✍️ কলমে: অমল পাত্র

📚 পেশা: অধ্যাপনা | লেখক: ✒️ লালপেঁচা

📍 ভারত (India)

Orange Tick Approval

🔎 ভূমিকা

২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ১৪৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। অথচ, এত বিশাল জনসংখ্যা নিয়েও ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য অত্যন্ত সীমিত। ফিফা বিশ্বকাপ, অলিম্পিক, কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অংশগ্রহণ বারবার হতাশ করেছে। কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে? কী কারণে ভারত ক্রীড়াক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্লেষণভিত্তিক কিছু তথ্য ও প্রস্তাবনা।

 ⚽ ফুটবলের বেহাল অবস্থা

ফিফা র‍্যাংকিং অনুযায়ী ২০২৫ সালে ভারতের স্থান ১২৬ নম্বরে। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, যোগ্যতা পর্বেই বিদায় নিতে হচ্ছে। ফুটবলের মতো বিশ্বজনীন খেলায় ভারতের এমন করুণ অবস্থা ক্রীড়াঙ্গনের সংকটকে স্পষ্ট করে তোলে।

 🏅 অলিম্পিকে ভারত: গর্ব না লজ্জা?

২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সংখ্যা ছিল ১১৭ জন (৭০ পুরুষ, ৪৭ মহিলা)। কিন্তু ফলাফল? মাত্র ১টি রূপো ও ৫টি ব্রোঞ্জ। তাতেই ৬৫ নম্বরে ভারত। হকির মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাতেও ৪৪ বছর পর ব্রোঞ্জ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অ্যাথলেটিক্স, জিমন্যাস্টিকস, সাঁতার—এতসব খেলায় ভারতের উপস্থিতি প্রায় অদৃশ্য।

🎾 কিছু ব্যতিক্রমী সাফল্য

টেনিসে সানিয়া মির্জা, ব্যাডমিন্টনে পি. ভি. সিন্ধু, গল্ফে অনির্বাণ লাহিড়ী—এদের মত নামগুলো কিছুটা আশার আলো দেখালেও, গোটা দেশের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র এক-একজন তারকার সাফল্য ক্রীড়াক্ষেত্রের সামগ্রিক উন্নতির পরিচয় দেয় না।

 🏗️ পরিকাঠামোর অভাব

ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে বিশ্বমানের স্টেডিয়ামের অভাব। ক্রিকেটে যেখানে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে একাধিক উন্নত স্টেডিয়াম দেখা যায়, অন্য খেলায় তো জেলা স্তরের মাঠই নেই। এর ফলে নতুন খেলোয়াড়দের অনুশীলনের যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয় না। এছাড়াও NIS (National Institute of Sports) ও SAI (Sports Authority of India)-এর অভাব এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি অন্যান্য খেলাগুলোর বিকাশে বড় অন্তরায়।

 🧑‍🏫 দক্ষ কোচ ও স্পটারের ঘাটতি

ক্রিকেটে ট্যালেন্ট খুঁজে বের করতে স্পটারের বিশাল ভূমিকা থাকলেও, অন্যান্য খেলায় এই পদ্ধতি প্রায় অনুপস্থিত। এছাড়াও, প্রশিক্ষণদানের ক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য কোচের অভাব লক্ষণীয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদেশি কোচদের দক্ষতা ভারতীয় কোচদের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।

 🎯 অল্প বয়স থেকেই প্রতিভা অন্বেষণ ও প্রশিক্ষণের অভাব

✅অল্প বয়স থেকেই প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য দেশব্যাপী দক্ষ স্পটার নিয়োগ করা জরুরি। খুঁজে পাওয়া প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের জাতীয় স্তরের একাডেমিতে রেখে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কিছু কিছু খেলায় জাতীয় একাডেমি থাকলেও, অল্প বয়স থেকে তুলে আনা প্রতিভাদের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট জাতীয় একাডেমির অভাব রয়েছে।

 💸 অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও বিজ্ঞাপনের প্রভাব

ভারতের GDP-এর মাত্র ০.১% ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যয় হয়। ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলায় সরকার ও বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক কম। বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের জন্যে ক্রিকেটে অর্থ ঢালেন, ফলে ক্রিকেট প্রচার ও প্রসারে এগিয়ে, অন্য খেলাগুলো পিছিয়ে পড়ে।

🚫 দুর্নীতি ও সামাজিক মনোভাব

খেলাধুলার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। সঠিক খেলোয়াড়কে সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব, আর্থিক অনিয়ম প্রভৃতি ক্রীড়ার উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ভারতীয় সমাজে এখনো খেলা একটি ‘অতিরিক্ত বিনোদন’ বলেই বিবেচিত, ফলে পরিবারগুলো পড়াশোনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

✅ সমাধানের পথ ও সুপারিশ

🎯 ভারতে ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নতির জন্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

1️⃣ 🏛️ একটি সমন্বিত ও আদর্শ কেন্দ্রীয় ক্রীড়ানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
2️⃣ 📚⚽ পড়াশোনা ও খেলাধুলা সমান্তরালভাবে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।
3️⃣ 🧭🏞️ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করতে দক্ষ স্পটার নিয়োগ করতে হবে।
4️⃣ 🏟️🇮🇳 জাতীয় স্তরের ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তুলতে হবে খুঁজে পাওয়া প্রতিভাদের জন্য।
5️⃣ 🧑‍🏫⚙️ আলাদা কোচ, উন্নত যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
6️⃣ 🏸🤝 দলগত খেলার পাশাপাশি একক খেলার প্রতিও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
7️⃣ 👶🏅 বয়সভিত্তিক দল গঠন করে ছোটবেলা থেকেই প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

 🎯 উপসংহার

আজ থেকেই পরিকল্পনা করে যদি ২০৪০ সালের অলিম্পিককে লক্ষ্য রেখে প্রস্তুতি শুরু করা যায়, তবে ভারত আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে শক্তিশালী স্থান অর্জন করবেই। খেলাধুলা শুধুমাত্র একটি বিনোদন নয়, বরং একটি দেশের গর্ব ও শক্তির প্রতীক—এই মনোভাব সমাজে গড়ে তুলতে পারলেই ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারত নবজাগরণের পথে এগোবে।


  নমস্কার 

        আমি অমল পাত্র আমি 'লালপেঁচা' বাংলা ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লিখে থাকি।
আমার লেখাগুলো আপনাদের কেমন লাগে, তা জানতে খুব ইচ্ছা করে।

✍️ এই লেখার শেষে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য একটি কমেন্ট বক্স রয়েছে। আপনাদের মতামত বা ভারতের ক্রীড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন, জানাতে সেখানে মন্তব্য করুন।


📢 বিশেষ ঘোষণা:
🖼️ প্রত্যেকটি ছবি সাধারণ 🤖 A.I. দ্বারা তৈরি — এমনকি অনুরূপ ছবিগুলিও।

 

Post a Comment

0Comments

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!