দেশী মাগুর: সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আর বলবর্ধক মাছ!

দেশী মাগুর: সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আর বলবর্ধক মাছ!

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

deshi-magur.jpg
 

দেশী মাগুর: প্রকৃতির এক অমূল্য রত্ন

বৈজ্ঞানিক নাম: Clarias batrachus (Linnaeus)
অন্য নাম: রঙিন মাগুর, বাঙালির প্রিয় মাগুর

দেশী মাগুর (Clarias batrachus) দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যাওয়া এক প্রাচীন ও অত্যন্ত জনপ্রিয় মাছ। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, সুস্বাদু মাংস এবং সহজে চলনশীল জীবনযাত্রা একে স্থানীয় বাজারে এক অত্যন্ত মূল্যবান প্রজাতি হিসেবে তুলে ধরেছে। তবে বর্তমানে দেশী মাগুরের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে, এটি আরও বেশি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

মাগুরের শারীরিক বৈশিষ্ট্য

মাগুরের শারীরিক গঠন খুবই বিশেষ। এর মাথা চওড়া ও বড় এবং এর গায়ে এক ধরনের চ্যাপ্টা নলাকার আকৃতি থাকে। পিঠে সূচালো কাঁটা থাকে, যা মাছটিকে সুরক্ষিত রাখে। এর মাথার দুপাশে বিশেষ ধরনের খাঁজ থাকে যা অনেকটা হেলমেট পড়া মাছের মতো দেখতে। মাগুরের গায়ের রঙ কালচে বা সবজেটে, এবং পেটের অংশটি অনেকটাই হালকা থাকে। এর শরীরের গায়ে ছোট ছোট ছোপ থাকে, যা আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

মাগুর মাছের চারটি শুঁড় থাকে, যার মধ্যে উপরের শুঁড় প্রায় কানকোর সীমানা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। মাছটি প্রায় দেড় ফুট পর্যন্ত বড় হতে পারে এবং এর পাখনা খুবই ছোট ও সূচালো।

মাগুরের জীবনচক্র ও স্বভাব

মাগুর সাধারণত স্রোতহীন মিঠে জলে বাস করতে পছন্দ করে। বর্ষাকালে, যখন বৃষ্টির জল জলাশয়ে প্রবাহিত হয়, মাগুররা পুরানো জলাশয় থেকে নতুন জায়গায় চলে আসে। এই সময়, বহু পুরুষ মাগুর একসঙ্গে একটি স্ত্রী মাগুরের পেছনে চলে আসে এবং ডিম ছাড়ে। মাগুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এর অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র, যার কারণে এটি জলাশয়ের বাইরে অনেক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে।

এটি মিঠে জলের কাদা বা পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে। অল্প বয়সী মাগুরের খাবারের প্রতি অগাধ আগ্রহ থাকে, এবং তারা খেতে খেতে পেট ফুলিয়ে ফেলতে পারে। মাগুরের জীবনে এই খাবারের পরিমাণই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাজারে প্রাপ্যতা এবং অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিল

দেশী মাগুরের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অত্যন্ত প্রশংসিত। এটি একটি খুবই দামি মাছ এবং এর মাংসের জন্য অনেকেই এই মাছটি বাজার থেকে কিনতে চান। শিঙি মাছের সঙ্গে মাগুরের কিছু মিল রয়েছে, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। শিঙি মাছের মাথা সরু এবং পিঠের পাখনা ছোট, যেখানে মাগুরের মাথা বড় এবং পিঠের পাখনা দীর্ঘ।

এছাড়া, আফ্রিকান মাগুরের কিছু জাত ছোট অবস্থায় দেশী মাগুরের মতো দেখতে হলেও, তাদের পেট সাদা এবং গায়ে ছোপ থাকে না। এগুলো কিছুটা গুলিয়ে যেতে পারে, তবে অভিজ্ঞদের পক্ষে এদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা সহজ।

বর্তমানে দেশী মাগুরের পরিস্থিতি

পশ্চিমবাংলার অনেক জায়গায় মাগুর মাছের সংখ্যা কমে গেছে। বিশেষত জলাশয়ের পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত শিকার এর প্রধান কারণ। যদিও দক্ষিণ ভারতের বাজারে দেশী মাগুর পাওয়া যায়, তবুও এটি যথেষ্ট দামি এবং কম প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।

উপসংহার

দেশী মাগুর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাছ, যা শুধু মানুষের খাদ্য হিসেবে নয়, বরং জলাশয়ের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবনের বৈচিত্র্য একটি বিশিষ্ট অধ্যায় যা প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।

দেশী মাগুর মাছটি, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, এবং এর সংরক্ষণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!