নবীনচন্দ্র সেন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে রানাঘাটের 'কবিমিলন উৎসব'

নবীনচন্দ্র সেন ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে রানাঘাটের 'কবিমিলন উৎসব'

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0
ইতিহাসের সাক্ষী রানাঘাট: রবীন্দ্রনাথ ও নবীনচন্দ্র সেনের ঐতিহাসিক কবি মিলন উৎসব - লালপেঁচা

ইতিহাসের সাক্ষী রানাঘাট: রবীন্দ্রনাথ ও নবীনচন্দ্র সেনের ঐতিহাসিক কবি মিলন উৎসব

১৮৯৪ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর (১৩০১ বঙ্গাব্দের ১৮ই ভাদ্র) নদীয়ার রানাঘাটে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছিল। সেই দিন তৎকালীন রানাঘাটের মহকুমা শাসক এবং বিশিষ্ট কবি নবীনচন্দ্র সেনের আমন্ত্রণে রানাঘাটে এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নবীনচন্দ্র তখন ৪৭ বছর বয়সী, আর যুবক রবীন্দ্রনাথের বয়স ৩৩। দুই কবির এই দুর্লভ মিলনকে স্মরণ করে প্রতি বছর রানাঘাট মহকুমা শাসক দপ্তরে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে পালিত হয় 'কবিমিলন উৎসব'। এই উৎসব রানাঘাটের ঐতিহ্য, গর্ব, অহংকার এবং পরম্পরার এক উজ্জ্বল ধারক।

নবীনচন্দ্র সেন: এক বর্ণময় জীবন ও প্রশাসক

নবীনচন্দ্র সেনের জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। বি.এ. পাশ করার পর প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাট্ক্লিফের সুপারিশে কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তবে এই পদটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এরপর তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন এবং কর্মজীবনে সফলতা লাভ করেন।

তিনি বেশ কিছুদিন রানাঘাট মহকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কর্মজীবনে বাংলা, বিহার এবং ত্রিপুরার অনেক স্থানেই দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছিল। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল নামে পরিচিত। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পর ১৯০৪ সালের ১লা জুলাই তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

নবীনচন্দ্র সেন: একজন বরেণ্য কবি ও সাহিত্যিক

নবীনচন্দ্র সেন শুধু একজন সুদক্ষ প্রশাসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন গুণী কবিও। যখন তিনি এফ.এ. (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক) শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন, তখন তাঁর প্রথম কবিতা 'কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি' তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট-এ প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম বই "অবকাশরঞ্জিনী"-এর প্রথম ভাগ ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ এবং এর দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৭৮ সালের ২৯শে জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

তাঁর মহাকাব্যগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • পলাশির যুদ্ধ (১৮৭৫)
  • রৈবতক (২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭)
  • কুরুক্ষেত্র (১৮ই জুলাই ১৮৯৩)
  • প্রভাস (১৮৯৭)
রানাঘাটের মহকুমা শাসক নবীনচন্দ্র সেনের আমন্ত্রণে ১৮৯৪ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর রানাঘাটে আগমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
রানাঘাটের মহকুমা শাসক নবীনচন্দ্র সেনের আমন্ত্রণে ১৮৯৪ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর রানাঘাটে আগমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।

রানাঘাটে দুই কবির ঐতিহাসিক মিলন এবং 'কবিমিলন উৎসব'

জানা যায়, ১৮৯৪ সালের সেই ৪ঠা সেপ্টেম্বরের সাক্ষাতের দিনে নবীনচন্দ্র সেনের বাসভবন কবিতা ও গানে মুখরিত হয়েছিল। কথিত আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই রাতে নবীনচন্দ্র সেনের বাসভবনেই রাত্রিযাপন করেছিলেন। দুই কবির মধ্যে কবিতা, গান-সহ বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও মতবিনিময় হয়েছিল।

এই ঐতিহাসিক সাক্ষাতের স্মৃতিকে ধরে রাখতে রানাঘাট মহকুমায় প্রতি বছর ঘটা করে ৪ঠা সেপ্টেম্বর 'কবিমিলন উৎসব' পালিত হয়। এই দিনটি রানাঘাটের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। রানাঘাট শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান কামারপাড়া মোড় সংলগ্ন জায়গায় দুই কবির আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা তাঁদের মিলন এবং রানাঘাটের প্রতি তাঁদের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

এই উৎসব শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি রানাঘাটের মানুষজনের কাছে তাঁদের গর্ব, ঐতিহ্য এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার এক প্রতীক।

এই লেখাটি ভালো লাগলে, নিচের Comment Box এ Comment করে জানান।

**দ্রষ্টব্য:** এই পোস্টে ব্যবহৃত প্রতিটি ছবিই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে — শুধুমাত্র আপনাদের বোঝানোর স্বার্থে।

রাজু বিশ্বাস
✍️ রাজু বিশ্বাস (Ranaghat, Nadia)

আপনার ব্লগের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক পোস্ট পড়ুন:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!