পাঁচথুপি: বাংলার একমাত্র অক্ষত পঞ্চায়তন মন্দির | Murshidabad Temple History

পাঁচথুপি: বাংলার একমাত্র অক্ষত পঞ্চায়তন মন্দির | Murshidabad Temple History

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

পাঁচথুপির পঞ্চায়তন মন্দির
 বাংলার একমাত্র অক্ষত পঞ্চায়তন মন্দির — পাঁচথুপি, মুর্শিদাবাদ
 অবস্থান: পাঁচথুপি, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ

সম্ভবত বাংলার একমাত্র অক্ষত পঞ্চায়তন মন্দির এটি। এই তথ্যটি যদি ভুল হয়, তবে অনুগ্রহ করে কমেন্ট বক্সে সংশোধন করে দিন।তবে, এই মন্দিরটি স্থানীয়ভাবে "নব-রত্ন" নামেও পরিচিত।

অক্ষত পঞ্চায়তন মন্দির —  মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি গ্রামের হাতিবাগানে অবস্থিত এই বিস্ময়কর স্থাপনাটি। ইতিহাস, ধর্মবিশ্বাস ও স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব মেলবন্ধন। আমি "সম্ভবত" বলছি কারণ, বলা হয় যে বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুরে একসময় এমন একটি মন্দির ছিল ,কিন্তু এর বর্তমান অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও নিশ্চিত তথ্য আমি পাইনি।  

 কীভাবে যাবেন: 
রেলপথেনিকটবর্তী স্টেশন বহরমপুর অথবা সাঁইথিয়া। সেখান থেকে স্থানীয় ট্রান্সপোটে /অটো করে পাঁচথুপি যাওয়া যায়।

রাস্তা রয়েছে: পাঁচথুপি, বহরমপুর থেকে ৪৪ কিমি এবং কান্দি অঞ্চল  থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত। বহরমপুর, কান্দি, সালার, সাঁইথিয়া, কাটোয়া এবং কলকাতা থেকে পাঁচথুপি গ্রামে যাওয়ার সরাসরি রাস্তা রয়েছে।

🌸 ধর্মীয় আচার ও উৎসব
 
💢মন্দিরে নিত্যপূজা হয়।
💢 শিবরাত্রী এবং শ্রাবণ মাসে, ভক্তরা বহরমপুর থেকে পায়ে হেঁটে গঙ্গাজল বয়ে নিয়ে এনে মাথায় ঢালেন। 
দশাবতারের পাঁচ অবতার উপরে ও নিচে দশাবতারের অবশিষ্ট পাঁচ  অবতার

🕍 ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও নামকরণ : পাঁচথুপি” নামটি এসেছে “পঞ্চস্তূপ” থেকে। ইতিহাস মতে, এই অঞ্চলে একসময় পাল যুগের পাঁচটি বৌদ্ধ স্তূপ ছিল। এখন সেই স্তূপ না থাকলেও তার ধ্বংসাবশেষ এবং বারোকোনা দেউল আজও স্মৃতি বহন করে। এক কিলোমিটারের মধ্যেই পাওয়া যায় একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। 

পূর্ব-দক্ষিণ কোণের দেউল

🪷 নামকরণের ইতিহাস : পাঁচথুপি গ্রামের নামকরণ সম্ভবত “পঞ্চস্তূপ” থেকে। ঐতিহাসিকদের মতে, এই অঞ্চলটি একসময় বৌদ্ধ সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। পাল আমলে এখানে পাঁচটি বৌদ্ধ স্তূপ নির্মিত হয়েছিল। “পঞ্চস্তুপ” অর্থাৎ পাঁচটি স্তুপ — এই শব্দবন্ধ থেকেই কালক্রমে বিকৃত হয়ে “পাঁচথুপি” নামটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। 

 

উত্তর-পূর্ব কোণের দেউল

🏛️ পঞ্চরত্ন না পঞ্চায়তন? – পার্থক্যটা বুঝে নেওয়া যাক

অনেকে প্রথম নজরে এই মন্দিরটিকে পঞ্চরত্ন মন্দির বলে মনে করলেও, এটি আসলে “পঞ্চায়তন মন্দির”  শৈলীর একটি বিরল নিদর্শন। 

দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দেউল
 📌 পঞ্চরত্ন মন্দির: চূড়ার গঠনের ভিত্তিতে নামকরণ হয় — কেন্দ্রে একটি বড় চূড়া ও চারপাশে চারটি ছোট চূড়া থাকে। যেমন পঞ্চরত্ন, নবরত্ন, ত্রয়োদশ রত্ন ইত্যাদি।

উত্তর-পশ্চিম কোণের দেউল
 
📌 পঞ্চায়তন মন্দির: এখানে মূল মন্দিরটি চতুষ্কোণ উঁচু ভিত্তির উপর স্থাপিত এবং তার চার কোণে চারটি ছোট মন্দির — সব মিলিয়ে পাঁচটি পৃথক দেউল ( শিখরযুক্ত ) মন্দির থাকে। সমগ্র ভারতে এই ধরণের মন্দির খুবই বিরল। 
মন্দির স্থান শতাব্দী
দশাবতার মন্দির দেবঘর, উত্তর প্রদেশ ৬ষ্ঠ শতক
ব্রহ্মেশ্বর মন্দির ভুবনেশ্বর, ওড়িশা ৯ম শতক
লক্ষ্মণ মন্দির খাজুরাহো ১০ম শতক
নবরত্ন মন্দির পাঁচথুপি, পশ্চিমবঙ্গ ১৮শ শতক

🕉️ নবরত্ন কেন বলা হয়?

 এই মন্দিরের গর্ভগৃহ এবং আশেপাশের ছোট ছোট মন্দিরগুলিতে মোট নয়টি শিবলিঙ্গ স্থাপিত রয়েছে।।  কেন্দ্রীয় মন্দিরে একটি বৃহৎ কালো পাথরের শিবলিঙ্গ, চারদিকে চারটি শ্বেতপাথরের শিবলিঙ্গ এবং চার কোণার প্রতিটি মন্দিরে একটি করে শিবলিঙ্গ রয়েছে— সব মিলিয়ে নয়টি, এবং প্রতিটি লিঙ্গকেই “রত্ন” বলা হয়, তাই স্থানীয়ভাবে এটি "নবরত্ন মন্দির" নামেও পরিচিত। 

 মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ পথের পাশে টেরাকোটা অবস্থিত।

🧱 নির্মাণকাল ও স্থাপত্য : মনে করা হয় যে, এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ১৮শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, বাংলার জমিদার জগন্নাথ ঘোষ হাজরা-র উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। ইট এবং চুন-সুরকির গাঁথুনিতে নির্মিত মন্দিরটির মঞ্চটি প্রায় আড়াই ফুট উঁচু। মন্দির প্রাঙ্গণটি একসময় রেলিং দিয়ে ঘেরা ছিল। 

মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ পথের পাশে টেরাকোটা অবস্থিত।

🎨 টেরাকোটা স্টাইলে সজ্জিত

 পাঁচথুপির প্রধান মন্দিরটি রথ-দেউল রীতিতে নির্মিত, প্রায় ৪০ ফুট উঁচু।মন্দিরের বহিরঙ্গে অসাধারণ টেরাকোটা ফলক রয়েছে, যেখানে দেখা যায়: 

পূর্ব-দক্ষিণ কোণের দেউল: দশাবতারের পাঁচ অবতার চিত্রিত।, উত্তর-পূর্ব কোণের দেউল: রাম-রাবণের যুদ্ধের দৃশ্য।দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দেউল: মহিষাসুরমর্দিনী ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি। উত্তর-পশ্চিম কোণের দেউল: কৃষ্ণ ও বলরামের লীলাচিত্র। মাঝের দেউল: দশাবতারের অবশিষ্ট অবতার, কালী, সরস্বতী, কার্তিক, বিষ্ণু ইত্যাদির চিত্র।

👉টেরাকোটায় সারিবদ্ধ হাতি, ফুল-লতা-পাতা(পদ্মফুল), শিকারদৃশ্য, কৃষ্ণলীলা , কালীমূর্তি, চতুর্ভুজ নারায়ণও জ্যামিতিক অলঙ্করণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চারকোনা ছোট মন্দিরগুলিতে সামান্য টেরাকোটার কাজ চোখে পড়ে।  

 ⚠️ সংরক্ষণের অবস্থা

 রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২৫০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।  অনেক জায়গায় টেরাকোটার ফলক খসে পড়ছে। তবে, আশার আলো দেখা যাচ্ছে — স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে যে রাজ্য সরকার মন্দিরটি পুনঃসংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছেন

এই সাদা পাথরের ফলকটি ভিত্তি বেদীর গোড়ায় স্থাপিত। 

📷 ভ্রমণপিপাসুদের জন্য:  যারা বাংলার অজানা ইতিহাস, মন্দির স্থাপত্য এবং লোকবিশ্বাসের প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য পাঁচথুপি অবশ্যই একটি "অবশ্যই দেখার মতো" স্থান। ইতিহাসপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের জন্যও এটি এক অপূর্ব গন্তব্য। আমি গুগল ম্যাপের অবস্থান দিচ্ছি ।পঞ্চথুপি  (যাকে পাঁচ থুপিও বলা হয়) পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার বুরওয়ান সিডি ব্লকের -এর অন্তর্গত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক গ্রাম। অক্ষাংশ: ২৩.৮৮৯৮° উত্তর , দ্রাঘিমাংশ: ৮৭.৯৮৮৯° পূর্ব ।

Post a Comment

0Comments

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!