
১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে মহেশের রথযাত্রা শুরু হয়। সেই সময় একজন বাঙালি সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী পুরীতে তীর্থযাত্রায় যান। কিন্তু জগন্নাথ দেবকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে না পারার কষ্টে তিনি অনশন শুরু করেন। তখন জগন্নাথ দেব তাকে স্বপ্নে বলেন - "বাংলায় ফিরে যাও, আমি মহেশের কাছে আসব।"
এই ঘটনার কয়েকদিন পর মাহেশে গঙ্গার স্রোতে ভেসে এলো একটি নিমকাঠের গুঁড়ি। ধ্রুবানন্দ সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি তৈরি করেন। এভাবেই মহেশের রথযাত্রার ঐতিহ্য শুরু হয়।
🛕 মাহেশের জগন্নাথ মন্দির ও শ্রীচৈতন্য
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুও মহেশের এসেছিলেন। তিনি মহেশকে 'নব নীলাচল' বলে সম্বোধন করেছিলেন। অন্তত মানুষ তাই বিশ্বাস করে। ধ্রুবানন্দের অনুরোধে, কমলাকর পিপলাই মহেশ মন্দিরের সেবার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, তাঁর উত্তরসূরিরা মন্দিরের পুরোহিত এবং রথযাত্রার প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন।
🚩 মাহেশ রথের বিবরণ
বর্তমান রথটি প্রায় ১২৯ বছরের পুরনো। এটি প্রায় ৫০ ফুট উঁচু এবং এতে ১২টি লোহার চাকা এবং ২টি তামার ঘোড়া রয়েছে। রথটি হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু, দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল এবং মার্টিন বার্ন কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।রথটি নবরত্ন শৈলীতে নির্মিত, অর্থাৎ এর ৯টি চূড়া রয়েছে। একসময় এর ১৩টি ছিল।
🚶♂️ রথযাত্রার দিন কী ঘটে?
প্রতি বছর আষাঢ় মাসে রথযাত্রার দিন বিকেল ৩:৩০ নাগাদ শুরু হয় রথ টানার উৎসব। রথটি জিটি রোড ধরে প্রায় ১ কিমি দূরে ‘মাসির বাড়ি’ (গুন্ডিচা মন্দির) পৌঁছায়। ৮ দিন পর ‘উল্টোরথ’-এ রথ আবার মূল মন্দিরে ফিরে আসে।
🎡 রথমেলা: লোকসংস্কৃতির মেলবন্ধন
রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক মাসব্যাপী বিশাল মেলা। এখানে থাকে হস্তশিল্প,খাবার,নাগরদোলা, কীর্তন, যাত্রাপালা, পুতুলনাচসহ বিভিন্ন লোক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকে। প্রতিবছর ২-৪ লক্ষ মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
📚 সাহিত্য ও মাহেশ: রাধারাণীর গল্প
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘রাধারাণী’-এর পটভূমি গঠিত হয়েছে মাহেশ রথযাত্রা ঘিরে। উপন্যাসে বর্ণিত এক মেলায় হারিয়ে যাওয়া কিশোরীর প্রেম ও পুনর্মিলন, আজও মাহেশের আবেগঘন পরিবেশকে জীবন্ত করে তোলে।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality