জাতীয় স্তরে ‘বন্দে মাতরম্’-এর স্বীকৃতি Vande Mataram - India's National Song and Its Role in Independence Movement

জাতীয় স্তরে ‘বন্দে মাতরম্’-এর স্বীকৃতি Vande Mataram - India's National Song and Its Role in Independence Movement

লালপেঁচা 🟥 ইন ডেস্ক |
0
vande-mataram-indian-national-song.JPG
গণপরিষদের অধিবেশনে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ সভাপতিরূপে বিবৃতি:(Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ)
Author
Raju Biswas
Published on: May 13, 2025
 জাতীয় স্তরে ‘বন্দে মাতরম্’-এর স্বীকৃতি: 'বন্দে মাতরম্' না 'জনগণমন'—কোনটি জাতীয় সঙ্গীত?
📌একসময় এই নিয়ে বিতর্ক ছিল—'বন্দে মাতরম্' না 'জনগণমন', কোনটি হবে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।অবশেষে, সংবিধান রচনার কাজ শেষ হওয়ার দু’মাস পর, ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি, গণপরিষদের শেষ অধিবেশনে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ সভাপতিরূপে একটি বিবৃতি দেন:
—“The composition consisting of the words and music known as Janaganamana is the National Anthem of India subject to such alteration in the words as the Government may authorise as occasion arises; and the song Vande Mataram, which has played a historic part in the struggle for Indian freedom, shall be honoured equally with Janaganamana and shall have equal status with it.” (Applause).I hope this will satisfy the members.
Dr. Rajendra Prasad, 24 January 1950, Constituent Assembly of India

             📘 — Constituent Assembly Debates, Vol. XII, Part II.

vande-mataram-indian-national-song.jpg
ভারত মাতার বিপ্লবীদের মূল মন্ত্র 'বন্দে মাতরম্' ধ্বনি (Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ)

গান না কি মন্ত্র?

‘বন্দে মাতরম্’ শুধু একটি গান নয়, একটি মন্ত্র, একটি আহ্বান। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় এই গানের ভাব ‘মাতৃভূমি’র পূজা ও জাতির আত্মশক্তির জাগরণে রূপ পায়।

 শ্রীঅরবিন্দ একে বলেন: "the religion of patriotism."

[📘Ref: Sri Aurobindo, Bande Mataram Writings]

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন:“...বার বার সুবর্ণ অক্ষরে লিখিয়া দিয়াছে: বন্দে মাতরম্।”

[📘 Source— রবীন্দ্ররচনাবলী, দশম খণ্ড, বিশ্বভারতী, পৃ. ৬৬৩]

রচনার সময়কাল ও স্থান:

  ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত এই গান প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ১৮৮২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস 'আনন্দমঠ'-এ।

vande-mataram-indian-national-song.jpg
বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস রচনায় নিমগ্ন (Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ)

তবে গানের সঠিক রচনাকাল নিয়ে বিতর্ক আছে। গবেষক জগদীশ ভট্টাচার্য মনে করেন, এটি ১৮৭৫ বা তারও আগে রচিত। অন্যদিকে গোপালচন্দ্র রায়ের মতে, বঙ্কিমচন্দ্র মালদহে থাকাকালীন ১৮৭৪ সালে পূজাবিদায় কাঁটালপাড়ায় এসে গানটি রচনা করেন।

📘 Source— গোপালচন্দ্র রায়, ‘বঙ্কিমচন্দ্র’, ১৯৮১, পৃ. ১৪০
📘 Source— জগদীশ ভট্টাচার্য, ‘বন্দে মাতরম্’, ১৯৭৮, পৃ. ১০

❖ প্রথম সুরারোপকারী: যদুভট্ট

যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—এই গানে প্রথম সুর দিলেন কে?

দীনবন্ধু মিত্রের পুত্র ললিতচন্দ্র মিত্র জানিয়েছেন, ভাটপাড়ার বিখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী গায়ক যদুনাথ ভট্টাচার্য (যিনি যদুভট্ট নামে পরিচিত) প্রথম এই গানে সুরারোপ করেন।তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের উপস্থিতিতে তাঁর কাঁটালপাড়ার বাড়িতে গানটি প্রথম সুরে বাঁধেন। সেই সময় তিনি নৈহাটির কাঁটালপাড়ায় বাস করতেন এবং বঙ্কিমচন্দ্রকে গান শেখাতেন।

vande-mataram-indian-national-song.jpg
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও সংগীত গুরু যদু ভট্টাচার্য(Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ)

 ❖রাগ ও তাল:‘আনন্দমঠ’-এ পাদটীকায় গানটির রাগ উল্লেখ করা হয়েছে:

👉 মল্লার রাগ
👉 কাওয়ালি তাল

এটি ধ্রুপদী ধারার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, তবে যদু ভট্ট ছিলেন মূলত ধ্রুপদ গায়ক।

        “...এই যদুভট্টই বঙ্কিমচন্দ্রকে গান শেখাতেন এবং বন্দে মাতরম্-এ প্রথম সুরও দিয়েছিলেন।”

📘 Source‘স্বদেশ’, ১২৯৭ বঙ্গাব্দ; উদ্ধৃত: গোপালচন্দ্র রায়, পৃ. ১৪০-১৪১

সুরের বৈচিত্র্য

‘বন্দে মাতরম্’-এর সুরচর্চা ও পরিবেশন দুটি ভাগে বিভক্ত:

👉 কণ্ঠসঙ্গীত: একক ও সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয়।

👉 আংশিক সুর: ‘সুখদাং বরদাং মাতরম্’ পর্যন্ত অংশটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

👉 যন্ত্রসঙ্গীত: জাতীয় অনুষ্ঠান বা দূরদর্শনে প্রায়ই ব্যবহার হয়।

আংশিক অংশ (প্রথম দুটি স্তবক) জাতীয় অনুষ্ঠান বা আকাশবাণী ও দূরদর্শনে প্রতিদিন এই আংশিক সংস্করণই বাজানো হয়। সমগ্র গানটি দীর্ঘ এবং অন্তর্নিহিত ধর্মীয় ও দার্শনিক ভাবনার জন্য অনেক সময় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কের বিষয়ও হয়েছে।

বন্দে মাতরম্’ এর গানের কাঠামো ও ব্যবহার:

     👉গানটির দুটি স্তবক “সুখদাং বরদাং মাতরম্” পর্যন্ত সরকারিভাবে গীত হয়।
     👉এই অংশই জাতীয় অনুষ্ঠান, দূরদর্শন বা আকাশবাণীতে বাজানো হয়।
    👉সম্পূর্ণ গানে আছে মাতৃভূমির বাহ্যিক সৌন্দর্য ছাড়াও ঐক্য, শক্তি, জ্ঞান, সাহস ইত্যাদি অনুপ্রেরণার কথা।

 ❖গানটির ঐতিহাসিক ও বিপ্লবী প্রভাব ও মূল্যায়ন:

  ‘বন্দে মাতরম্’ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক প্রাণ। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্য সেন, কানাইলাল দত্ত প্রমুখ বিপ্লবীর মুখে ছিল এই ধ্বনি।
মহাত্মা গান্ধী (১৯২৭): বলেছিলেন:

 "When we sing the ode to motherland, 'Bande Mataram', we sing it to the whole of India."

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়: ‘বন্দে মাতরম’-এর আত্মার সঙ্গে জাতির আত্মা যেন এক হয়ে গিয়েছিল।

📘 SourceCollected Works of Mahatma Gandhi, Vol. 33, p. 13
📘 Source‘প্রবাসী’, অগ্রহায়ণ ১৩৪৪

❖গানটির আধুনিক গ্রহণযোগ্যতা

আজও এই গানটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সংবিধানে এটি রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত নয়, গণপরিষদের ঘোষণায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন গান হিসেবে স্বীকৃত

❖ উপসংহার:

‘বন্দে মাতরম্’ একদিকে গান, অন্যদিকে ভারতীয় জাতির স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক। এই গানের সুরারোপ যদুভট্টের হাত ধরে শুরু হলেও পরে অনেকে নানা রূপ দিয়েছেন। তবু এর মূল তাৎপর্য আজও অটুট: একটি মন্ত্র, একটি ডাক, একটি প্রেরণা।


তথ্য অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সূত্র:

 👀Constituent Assembly Debates, Vol. XII

 👀ভট্টাচার্য, জগদীশ। বন্দে মাতরম্, ১৯৭৮।

 👀রায়, গোপালচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্র, ১৯৮১।

 👀প্রবাসী পত্রিকা, অগ্রহায়ণ ১৩৪৪

 👀স্বদেশ পত্রিকা, ১২৯৭ বঙ্গাব্দ

👀 Sri Aurobindo: Bande Mataram Writings, SABCL Series

🔍 (FAQs) – বন্দে মাতরম্ নিয়ে

বন্দে মাতরম্ কার লেখা এবং এটি কোন বইয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল?
বন্দে মাতরম্ গানটি রচনা করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এটি ১৮৮২ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "আনন্দমঠ"-এ প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়।
বন্দে মাতরম্ কখন ভারতের জাতীয় গান হিসেবে স্বীকৃতি পায়?
১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি, সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগেই, ভারতীয় সংবিধান সভায় বন্দে মাতরম্-কে ভারতের জাতীয় গান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বন্দে মাতরম্ গানটির মূল ভাষা কী ছিল?
এই গানটির ভাষা ছিল মূলত সংস্কৃত ও বাংলার সংমিশ্রণ, যা কাব্যিক সৌন্দর্য ও দেশভক্তির আবেগে সমৃদ্ধ।
জনগণমন এবং বন্দে মাতরম্-এর মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
জনগণমন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত এবং বন্দে মাতরম্ জাতীয় গান। দুটি গানই সমানভাবে গৌরবের প্রতীক হলেও, এগুলোর ব্যবহারিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বন্দে মাতরম্ গানটি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল?
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বন্দে মাতরম্ ছিল এক বিশাল অনুপ্রেরণার উৎস। বিপ্লবী আন্দোলন, মিছিল, সভা ও দেশপ্রেমমূলক কর্মকাণ্ডে এই গানটি গাওয়া হতো, যা লড়াইকারীদের চেতনায় আগুন জ্বালাত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!