![]() |
গণপরিষদের অধিবেশনে ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ সভাপতিরূপে বিবৃতি:(Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ) ❖জাতীয় স্তরে ‘বন্দে মাতরম্’-এর স্বীকৃতি: 'বন্দে মাতরম্' না 'জনগণমন'—কোনটি জাতীয় সঙ্গীত? |
—“The composition consisting of the words and music known as Janaganamana is the National Anthem of India subject to such alteration in the words as the Government may authorise as occasion arises; and the song Vande Mataram, which has played a historic part in the struggle for Indian freedom, shall be honoured equally with Janaganamana and shall have equal status with it.” (Applause).I hope this will satisfy the members.
— Dr. Rajendra Prasad, 24 January 1950, Constituent Assembly of India
![]() |
ভারত মাতার বিপ্লবীদের মূল মন্ত্র 'বন্দে মাতরম্' ধ্বনি (Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ) |
‘বন্দে মাতরম্’ শুধু একটি গান নয়, একটি মন্ত্র, একটি আহ্বান। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় এই গানের ভাব ‘মাতৃভূমি’র পূজা ও জাতির আত্মশক্তির জাগরণে রূপ পায়।
শ্রীঅরবিন্দ একে বলেন: "the religion of patriotism."
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন:“...বার বার সুবর্ণ অক্ষরে লিখিয়া দিয়াছে: বন্দে মাতরম্।”
❖ রচনার সময়কাল ও স্থান:
![]() |
বঙ্কিমচন্দ্র ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস রচনায় নিমগ্ন (Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ) |
তবে গানের সঠিক রচনাকাল নিয়ে বিতর্ক আছে। গবেষক জগদীশ ভট্টাচার্য মনে করেন, এটি ১৮৭৫ বা তারও আগে রচিত। অন্যদিকে গোপালচন্দ্র রায়ের মতে, বঙ্কিমচন্দ্র মালদহে থাকাকালীন ১৮৭৪ সালে পূজাবিদায় কাঁটালপাড়ায় এসে গানটি রচনা করেন।
📘 Source— গোপালচন্দ্র রায়, ‘বঙ্কিমচন্দ্র’, ১৯৮১, পৃ. ১৪০
📘 Source— জগদীশ ভট্টাচার্য, ‘বন্দে মাতরম্’, ১৯৭৮, পৃ. ১০
❖ প্রথম সুরারোপকারী: যদুভট্ট
যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো—এই গানে প্রথম সুর দিলেন কে?
দীনবন্ধু মিত্রের পুত্র ললিতচন্দ্র মিত্র জানিয়েছেন, ভাটপাড়ার বিখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী গায়ক যদুনাথ ভট্টাচার্য (যিনি যদুভট্ট নামে পরিচিত) প্রথম এই গানে সুরারোপ করেন।তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের উপস্থিতিতে তাঁর কাঁটালপাড়ার বাড়িতে গানটি প্রথম সুরে বাঁধেন। সেই সময় তিনি নৈহাটির কাঁটালপাড়ায় বাস করতেন এবং বঙ্কিমচন্দ্রকে গান শেখাতেন।
![]() |
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও সংগীত গুরু যদু ভট্টাচার্য(Artificial Intelligence দ্বারা নির্মিত প্রতিরূপ) |
👉 মল্লার রাগ
👉 কাওয়ালি তাল
এটি ধ্রুপদী ধারার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, তবে যদু ভট্ট ছিলেন মূলত ধ্রুপদ গায়ক।
“...এই যদুভট্টই বঙ্কিমচন্দ্রকে গান শেখাতেন এবং বন্দে মাতরম্-এ প্রথম সুরও দিয়েছিলেন।”
❖ সুরের বৈচিত্র্য
‘বন্দে মাতরম্’-এর সুরচর্চা ও পরিবেশন দুটি ভাগে বিভক্ত:
👉 কণ্ঠসঙ্গীত: একক ও সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয়।
👉 আংশিক সুর: ‘সুখদাং বরদাং মাতরম্’ পর্যন্ত অংশটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
👉 যন্ত্রসঙ্গীত: জাতীয় অনুষ্ঠান বা দূরদর্শনে প্রায়ই ব্যবহার হয়।
আংশিক অংশ (প্রথম দুটি স্তবক) জাতীয় অনুষ্ঠান বা আকাশবাণী ও দূরদর্শনে প্রতিদিন এই আংশিক সংস্করণই বাজানো হয়। সমগ্র গানটি দীর্ঘ এবং অন্তর্নিহিত ধর্মীয় ও দার্শনিক ভাবনার জন্য অনেক সময় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কের বিষয়ও হয়েছে।
❖ ‘বন্দে মাতরম্’ এর গানের কাঠামো ও ব্যবহার:
❖গানটির ঐতিহাসিক ও বিপ্লবী প্রভাব ও মূল্যায়ন:
‘বন্দে মাতরম্’ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক প্রাণ। ক্ষুদিরাম বসু, সূর্য সেন, কানাইলাল দত্ত প্রমুখ বিপ্লবীর মুখে ছিল এই ধ্বনি।
মহাত্মা গান্ধী (১৯২৭): বলেছিলেন:
"When we sing the ode to motherland, 'Bande Mataram', we sing it to the whole of India."
রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়:
‘বন্দে মাতরম’-এর আত্মার সঙ্গে জাতির আত্মা যেন এক হয়ে গিয়েছিল।
📘 Source— ‘প্রবাসী’, অগ্রহায়ণ ১৩৪৪
❖গানটির আধুনিক গ্রহণযোগ্যতা
আজও এই গানটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সংবিধানে এটি রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত নয়, গণপরিষদের ঘোষণায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন গান হিসেবে স্বীকৃত।
‘বন্দে মাতরম্’ একদিকে গান, অন্যদিকে ভারতীয় জাতির স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক। এই গানের সুরারোপ যদুভট্টের হাত ধরে শুরু হলেও পরে অনেকে নানা রূপ দিয়েছেন। তবু এর মূল তাৎপর্য আজও অটুট: একটি মন্ত্র, একটি ডাক, একটি প্রেরণা।
তথ্য অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সূত্র:
👀Constituent Assembly Debates, Vol. XII
👀ভট্টাচার্য, জগদীশ। বন্দে মাতরম্, ১৯৭৮।
👀রায়, গোপালচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্র, ১৯৮১।
👀প্রবাসী পত্রিকা, অগ্রহায়ণ ১৩৪৪
👀স্বদেশ পত্রিকা, ১২৯৭ বঙ্গাব্দ
👀 Sri Aurobindo: Bande Mataram Writings, SABCL Series