![]() |
Folklore Studies Kalyani University |
অনেকেই মনে করেন, লোকসংস্কৃতি (Folklore) মানেই শুধুমাত্র নাচগান শেখানো। এটি পুরোপুরি ভুল ধারণা। অবশ্যই লোকসঙ্গীত, লোকনৃত্য, লোকনাট্য এই বিভাগের অংশ, কিন্তু শুধুমাত্র নৃত্য-সঙ্গীত নয়, লোকসংস্কৃতি বিভাগের পড়াশোনা মানুষের শিকড়ের সন্ধান করার বিষয়।
কী পড়ানো হয়?
লোকসংস্কৃতি হল একটি বিস্তৃত বিষয় যেখানে মানুষের সাংস্কৃতিক শেকড়, ঐতিহ্য ও লোকবিশ্বাসের গবেষণা করা হয়। এখানে বিভিন্ন লোকসংস্কৃতিবিদদের তত্ত্ব, লোকভাষা, লোকভাষাবিজ্ঞান, জাতিগত সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, বিভিন্ন জনজাতির শিল্প, জীবনযাপন, ভাষা ইত্যাদি পড়ানো হয়।
![]() |
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় লোকসংস্কৃতি |
কোথায় পাওয়া যায় এই কোর্স?
পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়-এ স্নাতকোত্তর স্তরে লোকসংস্কৃতি পড়ানো হয়। তবে ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিষয় পড়ানো হয়, যেমন:
- কর্ণাটক লোকসংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়
- গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়
- উত্তর-পূর্ব পার্বত্য বিশ্ববিদ্যালয়
- মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়
- ঝাড়খন্ড কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
- মাদুরাই কামারাজ বিশ্ববিদ্যালয়
- কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি ও কোর্স কাঠামো
- যোগ্যতা: যে কোনো বিভাগ (Arts, Science, Commerce) থেকে অনার্সসহ স্নাতক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন।
- কোর্সের ধরন: এটি একটি রেগুলার কোর্স, ডিসটেন্স মোডে পাওয়া যায় না।
- সময়সীমা: ২ বছর, মোট ৪টি সেমিস্টার।
- ক্ষেত্রসমীক্ষা: বাধ্যতামূলক, যা ছাত্রদের গবেষণার দক্ষতা বাড়ায়।
- আন্তর্জাতিক ভর্তি: দেশ ও বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুযোগ রয়েছে।(বিদেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ (বৃত্তি) পাওয়া যায়)
![]() |
লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা |
লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের গবেষণা সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে:
- বাংলার লোকদেবদেবীর উপকরণ
- লোকপ্রযুক্তি
- বাদ্যযন্ত্র
- মৃৎশিল্প
- লোক পোশাক
- ঐতিহাসিক যুদ্ধাস্ত্র
![]() |
Folklore MA Admission |
অনেকে ভাবেন, লোকসংস্কৃতি নিয়ে পড়লে চাকরি পাওয়া কঠিন। কিন্তু এই বিষয়ে পড়াশোনা করলে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় পেশা রয়েছে:
- শিক্ষা ও গবেষণা: UGC-NET পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা ও অধ্যাপনায় যোগ দেওয়া যায়।
- সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থা: তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকে লোকসংস্কৃতিবিদদের চাহিদা রয়েছে।
- প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতত্ত্ব বিভাগ: আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এবং অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
- মিউজিয়াম ও কালচারাল ইনস্টিটিউট: মিউজিয়াম, কালচারাল ইনস্টিটিউট এবং গবেষণা সংস্থায় কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
- গণমাধ্যম ও প্রকাশনা: বিভিন্ন প্রকাশনা ও মিডিয়া হাউসে লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়।
![]() |
Folklore MA Admission |
ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা
লোকসংস্কৃতি বিভাগ মূলত বাংলা বিভাগের একটি শাখা থেকে জন্ম নেয়। আচার্য তুষার চট্টোপাধ্যায় স্নাতক ও সাম্মানিক স্নাতক স্তরে লোকসাহিত্য স্পেশাল পেপার হিসেবে এই বিষয় পড়ানো শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে ১০ম নৃতত্ত্ব বিষয়ক সম্মেলনে লোকসংস্কৃতি শাখার দায়িত্ব পায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।
পরবর্তীতে, ১৯৮২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, UGC অনুমোদিত INSTITUTE OF FOLKLORE প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ সালে তৎকালীন উপাচার্য ড. সিতাংশু মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০তম ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল সভায় প্রথম বোর্ড অফ স্টাডিস গঠিত হয়। ১৩ বছর পর ১৯৯০ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগে পরিণত হয়।
অনুষদের নাম:
লোকসংস্কৃতি শুধুমাত্র নাচগান শেখার বিষয় নয়, এটি সমাজের শেকড় খোঁজার একটি গবেষণাধর্মী শাখা। যারা এই বিষয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ। চাকরির ক্ষেত্রেও এটি একটি সম্ভাবনাময় অধ্যয়ন।আপনার যদি আরও প্রশ্ন থাকে, কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality