বর্গভীমা মন্দির: তমলুকের ঐতিহাসিক শক্তিপীঠ | পূর্ব মেদিনীপুর ভ্রমণ

বর্গভীমা মন্দির: তমলুকের ঐতিহাসিক শক্তিপীঠ | পূর্ব মেদিনীপুর ভ্রমণ

লালপেঁচা.in – বাংলার না-বলা কথা
0

bargabhima-temple-tamluk.jpg

বর্গভীমা মন্দির: তমলুকের ঐতিহাসিক শক্তিপীঠ



বর্গভীমা বা ভীমরূপা মাতা হলেন বঙ্গদেশের পৌরাণিক তাম্রলিপ্ত (বর্তমান তমলুক) জনপদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি কালী বা উগ্রতারার রূপে পূজিত হন। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মন্দিরটি ৫১ পীঠের অন্যতম এবং বলা হয়, এটি প্রথম পীঠ।

bargabhima-temple-tamluk.jpg

ইতিহাস ও পৌরাণিক প্রেক্ষাপট:

প্রাচীন বঙ্গদেশের ঐতিহাসিক বন্দরনগরী তাম্রলিপ্ত (তমলুক) ছিল বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অনুমান করা হয়, পৌরাণিক তাম্রলিপ্ত জনপদ প্রতিষ্ঠার পূর্বেই এই অঞ্চলে দেবী বর্গভীমার উপাসনা প্রচলিত ছিল। মন্দিরটি বহু শতাব্দী প্রাচীন এবং স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি বিভাষা সতীপীঠ নামে পরিচিত। কথিত আছে, সতী দেবীর বাঁ পাশের পাঁজরের হাড় এখানে পতিত হয়েছিল।


  ঠিকানা: মা বর্গভীমা মন্দির, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ – ৭২১৬৩৬
📞 ফোন নম্বর: +91 97355 09862

 পূজা দেওয়ার সময়:মন্দির খোলে 🕰️ প্রতিদিন: সকাল ৭টা – দুপুর ২টা, বিকেল ৩টা – রাত ৮:৩০(পরিবর্তনশীল)।

 📚 ইতিহাস ও ধর্মীয় গুরুত্ব:

ইতিহাসবিদদের মতে, বর্গভীমা মন্দির আদতে একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। কালক্রমে বঙ্গদেশে হিন্দুধর্ম পুনরুত্থানকালে এটি হিন্দু শক্তিপীঠে রূপান্তরিত হয়। রাজেন্দ্রলাল গুপ্ত তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, মূল মন্দিরের চারপাশে ছোট ছোট বিহারের ধ্বংসাবশেষ এখনও দৃশ্যমান।
 
📚 পীঠ মাহাত্ম্য ও পৌরাণিক কাহিনি:

ব্রহ্মপুরাণ অনুযায়ী, মহাদেব দক্ষযজ্ঞে ব্রহ্মহত্যার পাপের কারণে দক্ষের শির নিয়ে উদ্দাম নৃত্য শুরু করেন। শাপমুক্তির জন্য বিষ্ণুর নির্দেশে মহাদেব তাম্রলিপ্ত তীর্থে স্নান করেন, তখনই তাঁর হাত থেকে দক্ষের শির মুক্ত হয়। এই স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় দেবী বর্গভীমা।


⚔️ ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, এখানে অনেক বিপ্লবী শপথ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে ক্ষুদিরাম বসুও ছিলেন।এই বর্গভীমা মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্বও বিশাল। শান্তি, ভক্তি ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এই মন্দিরে একবার না ঘুরে এলে সত্যিই মিস করবেন!

bargabhima-temple-tamluk.jpg

 নেতাজির আগমন:
১৯৩৮ সালের ১১ই এপ্রিল, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এখানে মাতৃদর্শনে এসেছিলেন। তাঁর এই সফর মন্দিরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করে।

কালাপাহাড়ের কিংবদন্তি:
জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৫৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে কালাপাহাড় উড়িষ্যা বিজয়ের পর তাম্রলিপ্তে প্রবেশ করেন। দেবী বর্গভীমার মন্দির ধ্বংস করতে গিয়ে তিনি শক্তিহীন হয়ে পড়েন। সৈন্যরা তাঁকে মন্দিরে ঘুমন্ত অবস্থায় খুঁজে পান। এই অলৌকিক ঘটনার পর কালাপাহাড় আর কোনো মন্দির ধ্বংস করেননি।


🏛️ স্থাপত্যশৈলী:
bargabhima-temple-tamluk.jpg

 মন্দিরটি বহু শতাব্দী প্রাচীন এবং স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি বিভাষা সতীপীঠ নামে পরিচিত। কথিত আছে, সতী দেবীর বাঁ পাশের পাঁজরের হাড় এখানে পতিত হয়েছিল।মন্দিরের চারপাশে সংস্কার করা হলেও মূল স্থাপত্যরীতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে।বর্গভীমা মন্দির রেখা দেউল শৈলীতে নির্মিত। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট এবং দেওয়ালের প্রস্থ ৯ ফুট।মন্দিরটি চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

bargabhima-temple-tamluk.jpg
1️⃣ মূল মন্দির: দেবীর আরাধনার প্রধান স্থল, যেখানে বিরাজমান আদি শক্তির প্রতীক মা বর্গভীমা।
2️⃣ জগমোহন: ভক্তদের সমবেত প্রার্থনার স্থান, ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। 🛕
3️⃣ যজ্ঞ মন্দির: যেখানে বিশেষ পূজা এবং যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, শক্তির আরাধনায় নিবেদিত। 🔥🌺
4️⃣ নাট মন্দির: ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। 🎶🪔

 বাইরের দেওয়ালে ২৭টি পোড়ামাটির দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে, যা অষ্টাদশ শতাব্দীর শিল্পশৈলীর নিদর্শন।
bargabhima-temple-tamluk.jpg


bargabhima-temple-tamluk.jpg
  

উৎসব ও উপাসনা:

দুর্গাপূজা ও কালীপূজা:প্রতি বছর এই মন্দিরে দুর্গাপূজা, কালীপূজা এবং বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ উৎসবের আয়োজন হয়।

 বিশেষ প্রসাদ:উৎসব উপলক্ষে এখানে শোল মাছের প্রসাদ বিতরণ করা হয়, যা মন্দিরের ঐতিহ্যের অংশ।

bargabhima-temple-tamluk.jpg

  তমলুকের সতীপীঠ

🚉 নিকটতম রেলস্টেশন:  তমলুক রেলস্টেশন (প্রায় ২ কিমি দূরে)

🛣️ কলকাতা থেকে প্রায় ৮৫ কিমি দূরত্ব ।

🚌 যাতায়াতের উপায়:

  • ট্রেন: হাওড়া থেকে তমলুকের ট্রেন পরিষেবা উপলব্ধ।

  • বাস: কলকাতা থেকে তমলুকগামী বাস সহজেই পাওয়া যায়।

  • প্রাইভেট গাড়ি: NH6 বা NH41 রুটে গাড়িতে পৌঁছানো যায়।


 বর্গভীমা মন্দির

🔹 বিশেষ আকর্ষণ:

  • মন্দির চত্বরে শিবলিঙ্গ এবং অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে।

  • প্রতি বছর দুর্গাপুজো, কালীপুজো এবং অন্যান্য বিশেষ তিথিতে মন্দিরে বিশেষ পূজা হয়।

  • এটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম বলে মানা হয়, যা এই মন্দিরের পবিত্রতা ও মাহাত্ম্যকে বৃদ্ধি করেছে।

bargabhima-temple-tamluk.jpg
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!