- লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- প্রকাশক: বিশ্বভারতী
- প্রথম প্রকাশ: ১ জানুয়ারি, ১৯০৭ (পুনর্মুদ্রণ- ১৩৩৮ শ্রাবণ ,সংস্করণ ১৩৪৫ পৌষ ,পুনরায় মুদ্রণ ১৩৫২ আশ্বিন)
- বর্তমান সংস্করণ: ১ এপ্রিল, ২০১২
· মুদ্রিত মূল্য: 100/-
- ভাষা: বাংলা
- পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২৩
· কাগজের মান: 100 GSM
- ISBN: 9788175225411
- বাঁধাই: পেপারব্যাক
প্রচ্ছদ ও নান্দনিকতা:
· বইটির প্রচ্ছদ অত্যন্ত মৃদু ও শালীন রঙের, যা একধরনের ঐতিহ্যবাহী আবহ তৈরি করে। উষ্ণ বালুরঙা (Beige) ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর লাল কালি দিয়ে লেখা শিরোনাম ও লেখকের নাম একে আরও শৈল্পিক সৌন্দর্য দিয়েছে। এটি Minimalist Design-এর একটি চমৎকার উদাহরণ।
বিষয়বস্তু ও ভাবধারা
"লোকসাহিত্য" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চারটি প্রবন্ধের সংকলন, যেখানে তিনি বাংলার লোকসাহিত্যকে বিশ্লেষণ করেছেন এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বইটিতে লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক, ছড়া, সংগীত ও গ্রামীণ সাহিত্যের ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির সূচিপত্রে রয়েছে –
ছেলেভুলানো ছড়া – বাংলার শিশুতোষ ছড়া ও তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে বিশ্লেষণ।
ছেলেভুলানো ছড়া ২ – লোকছড়ার রূপ, প্রকৃতি ও প্রভাব নিয়ে গভীর আলোচনা।
কবি-সংগীত – বাংলার লোকসংগীত, বাউল, কীর্তন ও কবিগানের ভূমিকা নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা।
গ্রাম্যসাহিত্য – গ্রামীণ সাহিত্য ও তার সমাজ-সংস্কৃতিতে অবদান সম্পর্কে আলোচনা।
এই প্রবন্ধগুলোতে রবীন্দ্রনাথ লোকজ সংস্কৃতির গভীর বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখিয়েছেন, কীভাবে লোকসাহিত্য সমাজের অনুভূতি, জীবনযাত্রা ও ইতিহাসকে ধারণ করে। তিনি বাংলার গ্রামীণ সাহিত্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে এর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য ব্যাখ্যা করেছেন।
পাঠকের অনুভূতি:
যারা বাংলার লোকসংস্কৃতি, ছড়া, সংগীত ও গ্রামীণ সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এই বইটি অবশ্যপাঠ্য। রবীন্দ্রনাথের গভীর পর্যবেক্ষণ ও সাহিত্যিক বিশ্লেষণ পাঠককে লোকসাহিত্যের এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। বইটি পড়লে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির শিকড় সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া যায়।
বইয়ের ধরণ : গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ (লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক)।
রেটিং : ★★★★★ (৪/৫)
এই
বইটি লোকসাহিত্যের প্রতি আগ্রহী পাঠকদের জন্য অমূল্য সম্পদ এবং বাংলা সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
লেখকের পরিচিতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বাঙালি সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা এবং সমাজচিন্তার এক অনন্য প্রতিভা। তিনি একমাত্র নোবেল বিজয়ী বাংলা সাহিত্যিক, যিনি ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
এক নজরে:
- জন্ম: ৭ মে ১৮৬১, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা।
- মৃত্যু: ৭ আগস্ট ১৯৪১, কলকাতা।
- সাহিত্যকর্ম: কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, সংগীত।
বিখ্যাত রচনা: গীতাঞ্জলি, গোরা, চতুরঙ্গ, ঘরে-বাইরে, শেষের কবিতা, ডাকঘর, রক্তকরবী ইত্যাদি।
- বিশেষ অবদান: ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা।
- সাহিত্যিক অবদান: বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা।
লোকসাহিত্য" গ্রন্থ প্রসঙ্গে:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লোকসাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। তিনি লোকসাহিত্যকে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের কাহিনি বা সংস্কৃতি হিসেবে দেখেননি, বরং একে বাঙালির অন্তরের সাহিত্যরূপ বলে মনে করতেন। "লোকসাহিত্য" প্রবন্ধগ্রন্থে তিনি বাংলার লোকসংস্কৃতি, গান, লোককথা এবং সমাজচিত্রের মূল্যায়ন করেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের গবেষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রবীন্দ্রনাথের
এই অবদান বাংলার
সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে
আরও সমৃদ্ধ করেছে
এবং ভবিষ্যৎ গবেষকদের
জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
বই সম্পর্কিত বিষয়গুলি:
"লোকসাহিত্য" প্রবন্ধগ্রন্থটি মজুমদার লাইব্রেরি কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্যগ্রন্থাবলীর তৃতীয় ভাগ রূপে ১৩১৪ বঙ্গাব্দে (২৬শে জুলাই, ১৯০৭) প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে মোট চারটি প্রবন্ধ রয়েছে—
১. ছেলেভুলানো ছড়া
2. ছেলেভুলানো ছড়া ২
3. কবি-সঙ্গীত
4. গ্রাম্য-সাহিত্য
প্রথম প্রবন্ধটি "মেয়েলি ছড়া" নামে ১৩০১ বঙ্গাব্দের "সাধনা" পত্রিকার আশ্বিন-কার্তিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় প্রবন্ধে আলোচনা সংক্ষিপ্ত, এটি মূলত একটি ভূমিকা সহযোগে ১৩০১ বঙ্গাব্দের মাঘ সংখ্যায় "সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায়" সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। তৃতীয় প্রবন্ধটি "গুপ্তরত্নদারের সমালোচনা" নামে ১৩০২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় "সাধনা" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চতুর্থ প্রবন্ধ "গ্রাম্য-সাহিত্য" সর্বপ্রথম ১৩০৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যায় "ভারতী" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
বাংলা ভাষায় লোকসাহিত্য বিশ্লেষণে রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে পথিকৃতের মর্যাদা লাভ করেছেন। এই বইতেই তিনি প্রথমবারের মতো ছেলেভুলানো ছড়া ও গ্রাম্যসাহিত্যের কাব্যসৌন্দর্যের বিশ্লেষণ করেন এবং দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
"ছেলেভুলানো ছড়া ১ ও ২" গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছড়ার ঐতিহ্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। ছড়াগুলো কেবলমাত্র শিশুদের বিনোদনের জন্য রচিত হয়নি, বরং এগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে—
Ø প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা
Ø মানবিক শিক্ষা ও নৈতিকতা
Ø কল্পনার বিস্তার
ছেলেভুলানো ছড়া - ১
১৮৬১ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের প্রথম ছড়া সংগ্রহ করে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এই ছড়াগুলি মূলত মেয়েদের মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিল, তাই রবীন্দ্রনাথ প্রথমে ছড়াগুলোর নামকরণ করেন ‘মেয়েলি ছড়া’। পরবর্তীকালে লোকসাহিত্য গ্রন্থে ছড়াগুলোর নাম পরিবর্তন করে ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ রাখেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের এমন এক নক্ষত্র, যিনি সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে লোকজ সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রতি এক নিবিড় অনুরাগ লক্ষ করা যায়। লোকসাহিত্য গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ বিভাগে তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের লোকায়ত ঐতিহ্যকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেছেন। এই ছড়াগুলো তিনি কেবল সংকলন করেননি, বরং সৃজনশীলভাবে বিশ্লেষণ ও পুনর্গঠন করেছেন, যা তাঁর শিল্পীমনের উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, লোকসাহিত্য একটি জাতির প্রাণস্পন্দন বহন করে। তাই তিনি লোকজ ছড়াগুলোর প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ছিলেন। ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ছড়ার সহজ-সরল ভাষা, ছন্দময়তা এবং অন্তর্নিহিত ভাবকে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি লোকছড়ার অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনা, শিশুমনের আকর্ষণ ও আবেগপূর্ণ রূপের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন, যা তাঁর সূক্ষ্ম শিল্পীমনের পরিচায়ক।
প্রকাশনা ও প্রবন্ধ
‘ছেলেভুলানো ছড়া’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩০১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন-কার্তিক (১৮৯৪ সাল) ‘সাধনা’ পত্রিকায়। তবে তখন এর নাম ছিল ‘মেয়েলি ছড়া’। এটি সাজাদপুরে থাকাকালীন সময়ে লেখা হয়েছিল।
কবি লিখেছেন—
"বাংলা
ভাষায় ছেলে ভুলাইবার জন্য যে মেয়েলি ছড়া প্রচলিত আছে, কিছুকাল হইতে আমি তাহা সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত ছিলাম। আমাদের ভাষা এবং সমাজের ইতিহাস নির্ণয়ের পক্ষে সেই ছড়াগুলির বিশেষ মূল্য থাকিতে পারে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে যে একটা স্বাভাবিক কাব্যরস আছে, সেইটিই আমাদের নিকট অধিকতর আদরণীয় বোধ হইয়াছিল।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত ছড়াগুলি
"বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদে এলো বান"—এই ছড়াটি বাল্যকালে কবির কাছে মোহমন্ত্রের মতো ছিল। কবি লিখেছেন, সেই মোহ তিনি এখনো কাটাতে পারেননি। ছড়ার প্রতি মনের মুগ্ধ অবস্থা স্মরণ না করলে কেউ স্পষ্টভাবে ছড়ার মাধুর্য উপলব্ধি করতে পারবেন না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংগৃহীত ছেলেভুলানো ছড়ার পর্যালোচনা:
যমুনাবতী সরস্বতী, কাল যমুনার বিয়ে।
যমুনা যাবেন শ্বশুরবাড়ি কাজিতলা দিয়ে॥
কাজিফুল কুড়োতে পেয়ে গেলুম মালা।
হাত-ঝুম্-ঝুম্ পা-ঝুম্-ঝুম্ সীতারামের খেলা॥
নাচো তো সীতারাম কাঁকাল বেঁকিয়ে।
আলোচাল দেব টাপাল ভরিয়ে॥
আলোচাল খেতে খেতে গলা হল কাঠ।
হেথায় তো জল নেই, ত্রিপূর্ণির ঘাট॥
ত্রিপূর্ণির ঘাটে দুটো মাছ ভেসেছে।
একটি নিলেন গুরুঠাকুর, একটি নিলেন কে।
তার বোনকে বিয়ে করি ওড়ফুল দিয়ে॥
ওড়ফুল কুড়োতে হয়ে গেল বেলা।
তার বোনকে বিয়ে করি ঠিক-দুক্ষুর বেলা॥
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
এই ছড়াটি লোকজ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, যেখানে বিয়ের আনন্দ, লোকাচার ও কৌতুকমিশ্রিত ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।
Ø মূল ভাবনা: যমুনার বিয়ে কেন্দ্র করে গ্রামীণ রীতিনীতি ও উৎসবের আবহ তুলে ধরা হয়েছে।
Ø ধরন: ছন্দময় ও গল্পধর্মী ছড়া, যেখানে খেলার ছলে গ্রামবাংলার বিয়ের সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে।
Ø বিশেষ বৈশিষ্ট্য: ছড়াটির মধ্যে লোকজ উপাদান (যেমন: কাজিতলা, ত্রিপূর্ণির ঘাট, আলোচাল, ওড়ফুল) ব্যবহৃত হয়েছে, যা একে গ্রামীণ জীবনধারার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিফলন করে তুলেছে।
Ø ছন্দ ও শব্দের ব্যবহার: ঝংকারযুক্ত ধ্বনি (হাত-ঝুম্-ঝুম্, পা-ঝুম্-ঝুম্) ছড়ার সংগীতধর্মিতা বৃদ্ধি করেছে, যা শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়।
এটি খেলাচ্ছলে বলা, বিনোদনমূলক, কিন্তু গ্রামীণ ঐতিহ্যের গভীরতা বহনকারী একটি অনবদ্য ছড়া।
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদী এলো বান।
শিবু ঠাকুরের বিয়ে হল, তিন কন্যে দান॥
এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন, এক কন্যে খান।
এক কন্যে না খেয়ে বাপের বাড়ি যান॥
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø মূল ভাবনা: ছড়াটিতে বৃষ্টি, নদীর বান, এবং শিবঠাকুরের বিয়ের প্রসঙ্গের মাধ্যমে এক সরল, গ্রামীণ কাহিনি উপস্থাপন করা হয়েছে।
Ø ধরন: এটি লোকছড়ার এক সুন্দর উদাহরণ, যেখানে মজার ছলে পারিবারিক ও সামাজিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
🔹 বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
- বৃষ্টি ও নদীর বান— প্রকৃতির পরিবর্তনকে তুলে ধরে।
- তিন কন্যার ভিন্ন ভূমিকা— বিয়ের পর মেয়েদের দায়িত্ব ও অবস্থান সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক ইঙ্গিত দেয়।
🔹 ছন্দ ও শব্দের ব্যবহার:
- "টাপুর টুপুর" শব্দযুগল ছড়ার শ্রুতিমধুরতা বৃদ্ধি করেছে।
- সহজ-সরল বাক্য গঠনের ফলে শিশুদের মুখে মুখে প্রচলিত হওয়ার মতো এক অনবদ্য ছড়া।
এটি
লোকসংস্কৃতির প্রতিচিত্র, সামাজিক বাস্তবতা ও শিশুমনোরঞ্জনের এক আকর্ষণীয় সংমিশ্রণ।
এ পার গঙ্গা, ও পার গঙ্গা, মধ্যিখানে চর।
তারি মধ্যে বসে আছে শিব সদাগর॥
শিব গেল শ্বশুরবাড়ি, বসতে দিল পিঁড়ে।
জলপান করিতে দিল শালিধানের চিঁড়ে॥
শালিধানের চিঁড়ে নয় রে, বিন্নিধানের খই।
মোটা মোটা সব্রি কলা, কাগ্মারে দই।
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø মূল ভাবনা:
ছড়াটিতে গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও খাদ্যসংস্কৃতির এক ঝলক তুলে
ধরা
হয়েছে।
শিব
সদাগরের শ্বশুরবাড়ি যাওয়া
এবং
তাকে
দেওয়া
আপ্যায়নের প্রসঙ্গ ছড়ার
মূল
উপজীব্য।
Ø ধরন ও বৈশিষ্ট্য:
- এটি একটি লোকছড়া, যা গল্পচ্ছলে রচিত।
- শিব সদাগরের চরিত্র বাংলার লোকগাথা ও মঙ্গলকাব্যে পাওয়া যায়, যা এই ছড়ায় প্রতিফলিত হয়েছে।
- আঞ্চলিক খাদ্যের উল্লেখ (চিঁড়ে, খই, কলা, দই) ছড়াটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।
Ø ছন্দ ও ভাষা:
- সহজ ও সুরেলা ছন্দ ছড়াটিকে শ্রুতিমধুর করেছে।
- "এ পার গঙ্গা, ও পার গঙ্গা"— পুনরুক্তির মাধ্যমে ছড়াটির রিদম বা তাল তৈরি হয়েছে।
সারসংক্ষেপ: লোকজ
জীবনের
সরলতা,
অতিথি
আপ্যায়নের রীতি,
এবং
খাদ্যাভ্যাসের প্রতিচিত্র এই
ছড়ায়
সুন্দরভাবে ফুটে
উঠেছে।
আয় ঘুম, আয় ঘুম বাগ্দিপাড়া দিয়ে।
বাগ্দিদের ছেলে ঘুমোয় জাল মুড়ি দিয়ে॥
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø
মূল
ভাবনা:
এই ছড়াটি শিশুদের ঘুম পাড়ানোর জন্য প্রচলিত একটি লোকছড়া। এতে সংসারের
সরল
জীবনধারা
ও মাতৃস্নেহের প্রতিফলন রয়েছে।
Ø ধরন ও বৈশিষ্ট্য:
- এটি শিশুতোষ ছড়া, যা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময় গাওয়া হয়।
- "বাগ্দিপাড়া" এবং "বাগ্দিদের ছেলে"—এই শব্দগুচ্ছ লোকজ ঐতিহ্যের স্বাদ বহন করে।
- "জাল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো"—দরিদ্র মানুষের সহজ জীবনযাপন ও সংস্কৃতির প্রতিচিত্র।
Ø ছন্দ ও ভাষা:
- স্বরবৃত্ত ছন্দ ও পুনরাবৃত্তি ছড়াটিকে শ্রুতিমধুর করেছে।
- ছড়ায় আঞ্চলিক শব্দ ও সহজ বাক্যগঠন রয়েছে, যা একে লোকজ ও সাবলীল করেছে।
Ø
সারসংক্ষেপ:
এই ছড়াটি বাংলার গ্রাম্যজীবনের সরলতা ও ঘুমপাড়ানি গান হিসেবে ব্যবহৃত লোকসংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
খোকা এল বেড়িয়ে।
দুধ দাও গো জুড়িয়ে।
দুধের বাটি তপ্ত।
খোকা হলেন খ্যাপ্ত।
খোকা যাবেন নায়ে।
লাল জুতুয়া পায়ে।
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø ছন্দ ও ছন্দোবদ্ধতা – সহজ ও ছন্দময় বাক্যবন্ধ, যা শিশুদের মুখস্থ করতে সুবিধাজনক।
Ø শিশুর কৌতূহল ও ইচ্ছার প্রকাশ – খোকা দুধ খেতে চায়, নদীতে নৌকায় যেতে চায়, যা শিশুদের স্বাভাবিক কল্পনার প্রতিফলন।
Ø ‘খ্যাপ্ত’ শব্দটি কিছুটা দুর্বোধ্য – বর্তমান সময়ে শব্দটি খুব প্রচলিত নয়, ফলে শিশুরা এর অর্থ বুঝতে নাও পারে।
আয় আয় চাঁদ মামা,
টা দিয়ে যা।
চাঁদের কপালে চাঁদ
টা দিয়ে যা।।
মাছ কুটলে মুড়ো দেব,
ধান ভানলে কুঁড়ো দেব,
কালো গোরুর দুধ দেব,
খাবার বাটি দেব,
চাঁদের কপালে চাঁদ
টা দিয়ে যা।।
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø কল্পনার জগৎ – চাঁদকে মামা হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যা শিশুদের কল্পনাশক্তিকে উজ্জীবিত করে।
Ø খাদ্য ও পারিবারিক পরিবেশের ছোঁয়া – মাছ, ধান, দুধ ইত্যাদি উপাদান গ্রামীণ বাংলার চিত্র তুলে ধরে।
Ø ‘টা দিয়ে যা’ বাক্যটি অস্পষ্ট – এটি কী বোঝায়, তা ব্যাখ্যা না করলে শিশুরা পুরোপুরি বুঝতে নাও পারে।
উলু উলু মাদারের ফুল,
বর আসছে কত দূর?
বর আসছে বাঘ্যা পাড়া,
বড়ো বউ গো, রান্না চড়া।
ছোটো বউ লো, জলকে যা,
জলের মধ্যে ন্যাকা-জোকা।
ফুল ফুটেছে চাকা চাকা,
ফুলের বরণ কড়ি,
নটে শাকের বড়ি।।
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
Ø বিয়ের আয়োজনের গ্রামীণ চিত্র – বর আসার অপেক্ষা, রান্নার আয়োজন, ফুলের বরণ ইত্যাদি বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিফলন।
Ø সুরেলা ছন্দ ও শব্দচয়ন – ‘উলু উলু’, ‘ফুল ফুটেছে চাকা চাকা’ ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ ছড়ার ছন্দ বাড়িয়েছে।
Ø
কিছু শব্দের অর্থ অস্পষ্ট – ‘ন্যাকা-জোকা’ বা ‘বাঘ্যা পাড়া’ শব্দগুলো নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে দুর্বোধ্য হতে পারে।
সার্বিক মূল্যায়ন: এই ছড়াগুলো বাংলা শিশুসাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ, যা গ্রামীণ জীবনের ছবি তুলে ধরে এবং শিশুদের কল্পনাশক্তিকে সমৃদ্ধ করে। তবে কিছু শব্দ ও বাক্য বর্তমান প্রজন্মের জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে, যা সহজ ব্যাখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরা প্রয়োজন।
উপসংহার:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেভুলানো ছড়া – ১’ বাংলা শিশুসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এই ছড়াগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা ভাষার ঐতিহ্য, লোকজ সংস্কৃতি এবং শিশুমনের আকর্ষণকে তুলে ধরেছেন। তাঁর সংকলিত ও বিশ্লেষিত ছড়াগুলি কেবলমাত্র শিশুবিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির এক গভীর পরিচায়ক। ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ আজও শিশুদের মুখে মুখে ফিরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলার ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে। রবীন্দ্রনাথের এই অসামান্য অবদান বাংলা সাহিত্যের লোকজ ধারা সংরক্ষণে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরেছি।
ছেলেভুলানো ছড়া-২
সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় মাঘ ১৩০১ এবং কার্তিক ১৩০২ সালে “ছেলেভুলানো ছড়া-২” প্রকাশিত হয়। এটি লোকসাহিত্য গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত একটি সংক্ষিপ্ত রচনা। যদিও এটি ১৩০১ এবং ১৩০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, তবে ১৩৪৫ সালে লোকসাহিত্য গ্রন্থে সংকলিত হয়। রচনাটিকে প্রথম প্রবন্ধ “ছেলেভুলানো ছড়া”-র পরিপূরক হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই আলোচ্য প্রবন্ধে মাত্র তিনটি অনুচ্ছেদে ছড়ার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন এবং ৮১টি ছড়ার সংকলন যুক্ত করে প্রবন্ধটির কলেবর বৃদ্ধি করেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধের তিনটি অনুচ্ছেদে তিনি বিশেষভাবে দুটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন—
১. সংক্ষেপে ছড়ার রস বিশ্লেষণ করেছেন।
২. ছড়া সংগ্রহের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে মতামত প্রদান করেছেন।
ছেলেভুলানো ছড়ার মধ্যে যে স্বতন্ত্র রস রয়েছে, তাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “বাল্যরস” বলে অভিহিত করেছেন। প্রবন্ধের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে তিনি স্বীকার করেছেন—
"এই রসের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে আমি বাংলাদেশের ছড়া সংগ্রহে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম।"
তিনি আরও বলেছেন যে, এই ছড়াগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন—
"এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। বহুদিন ধরে আমাদের দেশের মাতৃভাণ্ডারে এই ছড়াগুলি রঞ্জিত হয়ে আসছে। আজকাল এই ছড়াগুলি লোকে ক্রমশ বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক পরিবর্তনের স্রোতে ছোট-বড় অনেক মূল্যবান সম্পদ অলক্ষিতভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। অতএব, জাতীয় প্রাচীন ঐতিহ্য সযত্নে সংরক্ষণ করার উপযুক্ত সময় উপস্থিত হয়েছে।"
রবীন্দ্রনাথের এই বক্তব্য লোকসাহিত্যের সংরক্ষণের গুরুত্বকে তুলে ধরে। তিনি মনে করেন যে, লোকসাহিত্য একটি জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ এবং তার সংরক্ষণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য। ছেলেভুলানো ছড়াগুলো কেবলমাত্র শিশুদের বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তা সমাজের সামগ্রিক সংস্কৃতি, ধ্যান-ধারণা ও ভাষার বিকাশের প্রতিফলন।
কিছু ছড়াগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ।
১ নম্বর ছড়া:
আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে।
ঢাক মৃদং ঝাঁঝর বাজে॥
বাজতে বাজতে চলল ডুলি।
ডুলি গেল সেই কমলাপুলি॥
কমলাপুলির টিয়েটা।
সূয্যিমামার বিয়েটা॥
আয় রঙ্গ হাটে যাই।
গুয়া পান কিনে খাই॥
একটা পান ফোঁপরা।
মায়ে ঝিয়ে ঝগড়া॥
কচি কচি কুমড়োর ঝোল।
ওরে খুকু গা তোল্॥
আমি তো বটে নন্দঘোষ--
মাথায় কাপড় দে॥
হলুদ বনে কলুদ ফুল।
তারার নামে টগর ফুল॥
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
এই ছড়াটি মূলত লোকসংস্কৃতির আনন্দ ও ছন্দময়তার প্রকাশ। এতে অলৌকিক ও কল্পনাপ্রবণ দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে, যেখানে ঢাক-মৃদঙ্গ বাজিয়ে বিয়ের আনন্দ, মেলায় ঘোরা, খাবার, ঝগড়া, প্রকৃতি ও শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস ফুটে উঠেছে।
Ø মূল ভাবনা: গ্রামবাংলার সংস্কৃতি, লোকজ ছন্দ ও শিশুদের সরল আনন্দ।
Ø ধরন: ছন্দময়, চিত্রময় ও খেলাধুলার মতো প্রাণবন্ত।
Ø বার্তা: শিশুদের কল্পনার জগৎ, লোকজ উৎসব ও বিয়ের আনন্দঘন পরিবেশ তুলে ধরা হয়েছে।
আরও একটি ছড়ার উদাহরণ।-
আগ্ডম বাগ্ডম ঘোড়াডম সাজে।
ডান মেকড়া ঘাঘর বাজে॥
বাজতে বাজতে পড়ল টুরি।
টুরি গেল কমলাপুরি॥
ছড়ার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
এই ছড়াটি লোকসংস্কৃতির ছন্দময়তা ও কল্পনার রঙিন জগৎ ফুটিয়ে তোলে। এখানে আগ্ডম-বাগ্ডম ধরণের শব্দচয়ন শিশুদের কৌতূহল জাগানোর জন্য উপযুক্ত। ছড়ার লাইনগুলোতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও মেলার পরিবেশ উঠে এসেছে।
Ø মূল ভাবনা: লোকজ ছন্দ ও শব্দের খেলায় তৈরি একটি প্রাণবন্ত দৃশ্য।
Ø ধরন: শিশুতোষ, ছন্দময় ও খেলাচ্ছলে বলা ছড়া।
Ø বার্তা: শিশুর কল্পনার রাজ্য ও গ্রামবাংলার সরল আনন্দময় সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে।
উপসংহার:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেভুলানো ছড়া-২’ শুধুমাত্র ছড়ার সংকলন নয়, এটি বাংলা লোকসাহিত্যের এক মূল্যবান দলিল। প্রবন্ধটিতে ছড়ার স্বতন্ত্র রস, যা তিনি ‘বাল্যরস’ বলে উল্লেখ করেছেন, তার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ছড়াগুলো সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি যে মতামত দিয়েছেন, তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
এই ছড়াগুলো কেবলমাত্র শিশুদের মনোরঞ্জনের উপকরণ নয়, বরং বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ। সময়ের সঙ্গে লোকসাহিত্যের অনেক ধারা বিলুপ্তির পথে থাকলেও রবীন্দ্রনাথের এই সংকলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অনন্য সম্পদ হয়ে থাকবে। তাই ছেলেভুলানো ছড়ার সংরক্ষণ ও গবেষণা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কবি-সংগীত
‘সাধনা’ পত্রিকায় ১৩০২ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। কবি-সংগীত বাংলার প্রাচীন ও আধুনিক কাব্যসাহিত্যের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। এটি একসময়ে বাংলা সাহিত্যে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রসার লাভ করেছিল, কিন্তু পরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। এতে মূলত কবিয়ালদের গান অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এক ধরনের মুখে মুখে সৃষ্ট পদাবলী।
এ ধরনের কবিগান মূলত বাগযুদ্ধের মতো, যেখানে উপস্থিতিতে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার চেষ্টা করা হতো। শ্রোতারাও ভাষার অলঙ্কার, অনুপ্রাস ও কৌশলকে গুরুত্ব দিতেন, যার ফলে এই গানগুলি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে এতে ভাবের গভীরতার চেয়ে কথার চমক ও উপস্থিত বুদ্ধির মূল্য বেশি ছিল।
এটি সাধারণত দুই বা ততোধিক কবিয়ালের মধ্যে গীত সংলাপের আকারে হতো। কবিয়ালরা মঞ্চে উপস্থিত হয়েই বুদ্ধি, যুক্তি ও কাব্যশক্তি দিয়ে পদ তৈরি করতেন। এতে রসিকতা, সামাজিক উপহাস, তর্ক এবং তীব্র বাকযুদ্ধ থাকত।
সুর ও তাল
কবিগান সাধারণত দোহারসহ পরিবেশিত হতো এবং বেহালা, ঢোল, খোল ইত্যাদির সঙ্গে গাওয়া হতো। ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ও এতে স্থান পেত।
কবি-সংগীতের ধরন
- শাস্ত্রীয় কবিগান – এতে ধর্মীয় বিষয়বস্তু যেমন কৃষ্ণলীলা, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি থাকত।
- আধুনিক বা সামাজিক কবিগান – এটি সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি নিয়ে রচিত হতো।
- নকশা কবিগান – এটি হাস্যরসাত্মক ও বিদ্রূপাত্মক কবিগান, যেখানে সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা হতো।
রবীন্দ্রনাথের লোকসাহিত্য গ্রন্থে গ্রাম-সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের নিবিড়ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি প্রাকৃতিক ও বাস্তবধর্মী সাধারণ মানুষের ভাষা ও ভাবনার সঙ্গে সহজভাবে মিশে থাকে।
যেমন উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা যেতে পারে:
গেল গেল কুল কুল, যাক কুল--
তাহে নই আকুল।
লয়েছি যাহার কুল সে আমারে প্রতিকূল॥
যদি কুলকুণ্ডলিনী অনুকূলা হন আমায়
অকূলের তরী কূল পাব পুনরায়॥
এখন ব্যাকুল হয়ে কি দুকূল হারাব সই।
তাহে বিপক্ষ হাসিবে যত রিপুচয়॥
সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
Ø
মূল
ভাবনা:
এই ছড়াটি বাংলার লোকসংস্কৃতিতে প্রচলিত দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা বহন করে। এখানে "কুল" (বংশ/সমাজ) ও "অকূল" (অপরিচিত বা অনিশ্চিত পরিবেশ)—এই দুই ধারণার মধ্যে দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে।
Ø ধরন ও বৈশিষ্ট্য:
- ছড়াটিতে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া রয়েছে, যা ভাগ্যের পরিবর্তন, প্রতিকূলতা ও জীবনের সংকট নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে।
- "কুল" ও "অকূল" প্রতীকী রূপে ব্যবহৃত হয়েছে—একটি সামাজিক অবস্থান বোঝায়, অন্যটি অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
- "কুলকুণ্ডলিনী" শব্দটি কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক, যা আধ্যাত্মিক মুক্তির ইঙ্গিত দেয়।
Ø ছন্দ ও ভাষা:
- স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা, যা ছড়ার তাল ও গতি বজায় রাখে।
- অন্ত্যমিলযুক্ত বাক্যগঠন একে শ্রুতিমধুর করেছে।
- ছড়ায় দার্শনিক ব্যঞ্জনা আছে, যা বাংলা লোকসংস্কৃতিতে বিরল নয়।
Ø
সারসংক্ষেপ:
এই ছড়াটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংকটের মধ্যেও ধৈর্য ধরে নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকার বার্তা দেয়। এখানে ভাগ্য,
অনুকূলতা
ও প্রতিকূলতার দোলাচল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সাধ ক'রে করেছিলেম দুর্জয় মান,
শ্যামের তায় হল অপমান।
শ্যামকে সাধলেম না, ফিরে চাইলেম না,
কথা কইলেম না রেখে মান॥
কৃষ্ণ সেই রাগের অনুরাগে, রাগে রাগে গো,
পড়ে পাছে চন্দ্রাবলীর নবরাগে।
ছিল পূর্বের যে পূর্বরাগ, আবার একি অপূর্ব রাগ,
পাছে রাগে শ্যাম রাধার আদর ভুলে যায়॥
যার মানের মানে আমায় মানে, সে না মানে
তবে কি করবে এ মানে।
মাধবের কত মান না হয় তার পরিমাণ,
মানিনী হয়েছি যার মানে॥
যে পক্ষে যখন বাড়ে অভিমান,
সেই পক্ষে রাখতে হয় সম্মান।
রাখতে শ্যামের মান, গেল গেল মান,
আমার কিসের মান-অপমান॥
সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
Ø মূল ভাবনা: এই কবিতায় রাধা-কৃষ্ণের মান-অভিমানের রসায়ন ফুটে উঠেছে। এটি ভক্তিরস ও শৃঙ্গার রসের মিশ্রণ—যেখানে মান-অভিমান, প্রেম ও আত্মসম্মানের টানাপোড়েন প্রতিফলিত হয়েছে।
Ø ধরন ও বৈশিষ্ট্য:
- রাধার অভিমান ও কৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া এখানে চিত্রিত হয়েছে।
- প্রেমে মান-অভিমানের স্থান কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রকাশ পেয়েছে।
- অন্ত্যমিল ও অলঙ্কারপূর্ণ ভাষা ছড়ার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
Ø ছন্দ ও ভাষা:
- কবিতাটি তাল ও লয়ের দিক থেকে অত্যন্ত শ্রুতিমধুর।
- "রাগ", "মান", "অপমান", "অভিমান"—এই শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি ছন্দময়তা তৈরি করেছে।
- পুর্বরাগ ও অপূর্ব রাগের প্রসঙ্গ এনে কবি প্রেমের গভীরতা বোঝাতে চেয়েছেন।
Ø
সারসংক্ষেপ:
এটি রাধা-কৃষ্ণের প্রেম ও মান-অভিমানের অনন্য কাব্যিক প্রকাশ। প্রেমের গর্ব, আত্মসম্মান, অভিমান ও পুনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষা—সবকিছু মিলিয়ে এটি এক দারুণ রসঘন ছড়া।
কবি-সংগীতে নারী শুধু প্রেমিকা নয়, বরং প্রেমের জন্য লড়াইকারীও। রাধার অভিমান এই প্রতিযোগিতারই অংশ।
কবি-সংগীত বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য ধারা, যা প্রাচীন কবিগান ও আধুনিক কাব্যধারার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি মূলত মুখে মুখে রচিত ও পরিবেশিত হতো, যেখানে উপস্থিত বুদ্ধি, কাব্যশক্তি ও তর্কের মাধ্যমে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করা হতো। যদিও এটি একসময় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, ধীরে ধীরে আধুনিক সাহিত্য ও সংগীতের চাপে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বিশেষ করে রাধিকার অভিমান বিষয়টি কবি-সংগীতে গভীরভাবে উঠে এসেছে, যা শুধু ব্যক্তিগত আবেগ নয়, বরং প্রেমের মনস্তত্ত্ব ও সামাজিক প্রতিচ্ছবি বহন করে। প্রেমে অভিমান, প্রতিযোগিতা ও বিরহের অনুভূতি কবিগানকে সমৃদ্ধ করেছে এবং এই ধারার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
আজকের যুগে কবি-সংগীত তেমন প্রচলিত না থাকলেও এর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি বাংলার লোকসংস্কৃতি ও কাব্যরসের এক অমূল্য সম্পদ, যা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নতুনভাবে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে বাংলার লোকসংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে।
গ্রাম্যসাহিত্য
‘ভারতী’ পত্রিকায় ১৩০৫
বঙ্গাব্দের ফাল্গুন-চৈত্র
সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
গ্রাম্যসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের
এক গুরুত্বপূর্ণ ধারা,
যা সাধারণ মানুষের
জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, আনন্দ-বেদনা,
বিশ্বাস-অবিশ্বাস এবং
সামাজিক সম্পর্ককে নিবিড়ভাবে
তুলে ধরে। আলোচ্য
প্রবন্ধে বলা হয়েছে
যে গ্রাম্যসাহিত্যে বাঙালির
আস্ত জীবন পূর্ণ
মূর্তিতে প্রকাশিত হয়েছে,
অর্থাৎ বাংলার গ্রামীণ
সমাজের বাস্তবচিত্র এতে
নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
গ্রাম্যসাহিত্য
বলতে মূলত সেই
সাহিত্যকে বোঝানো হয়,
যা গ্রামবাংলার সাধারণ
মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও
লোকাচারকে কেন্দ্র করে
গড়ে ওঠে। এটি
লোকগাথা, ছড়া, কবিতা, পালাগান, কবিগান, বিয়ের গান,
ব্রতকথা, রূপকথা ও
কাহিনিসমৃদ্ধ গ্রন্থের মাধ্যমে
প্রকাশিত হয়।
গ্রাম্যসাহিত্যের বিশেষত্ব:
- এটি প্রাকৃতিক ও বাস্তবধর্মী।
- সাধারণ মানুষের ভাষা ও ভাবনা এতে সহজাতভাবে মিশে থাকে।
- এতে লোকবিশ্বাস, ধর্ম, রীতি-নীতি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটে।
কৃষিজীবন ও শ্রমজীবী মানুষ:
গ্রাম্যসাহিত্যে কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রম, ঋতুবৈচিত্র্য, ফসল কাটার আনন্দ ও কৃষিজীবনের কষ্ট ফুটে উঠেছে। যেমন—
"ধান কাটো,
ফসল তোলো,
বউ ঠাকুরঝি গান
করো।"
এই ছড়ায় কৃষিজীবনের পরিশ্রম ও আনন্দের মিশ্র প্রতিচিত্র পাওয়া যায়।
পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক:
গ্রাম্যসাহিত্যে পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক, বিশেষত মা ও সন্তানের স্নেহ, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা এবং যৌথ পরিবারের রীতিনীতি সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। ‘ছেলেভুলানো ছড়া’গুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, মা কীভাবে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর জন্য গল্প ও ছড়া ব্যবহার করতেন।
গ্রামবাংলার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, ভূতপ্রেতের কাহিনি, তন্ত্রমন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি গ্রাম্যসাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
"ওগো মা,
দেখেছ কি,
গাছতলায় শাকচুন্নি!"
এটি লোকবিশ্বাসের প্রতিচিত্র
বহন করে। গ্রাম্যসাহিত্যে শুধু
আনন্দ-বেদনা নয়,
বরং বাঙালির আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও
রাজনৈতিক চেতনাও ফুটে
উঠেছে। এটি বাঙালির
আস্ত জীবনের পূর্ণ
রূপ প্রকাশ করেছে।
- কৃষি, পশুপালন, কুটিরশিল্প ইত্যাদি গ্রামীণ জীবনের প্রধান উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখানো হয়েছে।
• পূজা-পার্বণ, ব্রতকথা, লোকসংস্কৃতির নানা দিক এতে এসেছে।
• সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, সুখ-সমৃদ্ধি ইত্যাদি আবেগের অনুরণন এতে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
গ্রাম্যসাহিত্য বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনগাথা। এতে সমাজ, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, লোকবিশ্বাস, কৃষিজীবন ও ধর্মীয় আচারসহ বাঙালির আস্ত জীবন পূর্ণ মূর্তিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের অন্যতম ভিত্তি, যা আমাদের শিকড়ের পরিচয় বহন করে।
বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে "ছেলেভুলানো ছড়া", "ছেলেভুলানো ছড়া ২", "কবি সংগীত" ও "গ্রাম্য সাহিত্য" গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো ভাষার স্বাভাবিক গতি, সংস্কৃতি, সমাজের চিত্র, শিশুদের মনস্তত্ত্ব এবং লোকজ ভাবধারা ফুটিয়ে তোলে। তবে, সব সাহিত্য রচনারই কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে।
ইতিবাচক দিকসমূহ:
• বাংলা গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্য, শিশুদের বিনোদন ও শিক্ষার একটি বড় মাধ্যম হিসেবে ছেলেভুলানো ছড়া গুরুত্বপূর্ণ।
• শিশুদের জন্য সহজ ভাষা, ছন্দময়তা ও কল্পনাপ্রবণ বিষয়বস্তু এসব ছড়াকে স্মরণীয় করে তোলে।
• ছড়াগুলো শিশুর ভাষা শেখার দক্ষতা, কল্পনাশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
• বহু পুরনো ছড়া লোকজীবনের প্রতিচ্ছবি বহন করে, যা ভাষাবিজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতি গবেষণায় মূল্যবান।
• এটি বাংলা কাব্যের এক অনন্য ধারা, যেখানে কাব্যিক সৌন্দর্য ও সংগীতের সংমিশ্রণ ঘটেছে।
• কবি সংগীত বাংলা সাহিত্যে ছন্দ ও শব্দের খেলাকে ফুটিয়ে তোলে।
• বহু কবি সংগীত দর্শন ও আত্মিক শান্তির বার্তা বহন করে, যা পাঠক ও শ্রোতার মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
• গ্রামীণ সমাজের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ তুলে ধরে।
• শহুরে সাহিত্যের তুলনায় এটি সাধারণ মানুষের ভাষা ও অনুভূতির কাছাকাছি।
• সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস গবেষণায় গ্রাম সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নেতিবাচক দিকসমূহ:
• কিছু ছড়ায় বাস্তবতাবিবর্জিত কল্পনা ও অলৌকিকতা বেশি, যা শিশুদের বাস্তব চিন্তা ও যুক্তিবোধে প্রভাব ফেলতে পারে।
• কিছু ছড়ায় সামাজিক বা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের ছাপ দেখা যায়, যা আধুনিক সমাজের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
• কিছু কবি সংগীতে বাস্তবতার চেয়ে আবেগ ও কল্পনার আধিক্য বেশি, যা কখনো কখনো অতি-আলোকিত ভাবনার সৃষ্টি করে।
• অনেক কবি সংগীত সাধারণ মানুষের চেয়ে শিক্ষিত ও কাব্যরসিকদের জন্য বেশি উপযুক্ত, ফলে গণমানুষের কাছে তার প্রভাব সীমিত।
• অনেক গ্রামীণ সাহিত্য প্রাচীন ধ্যান-ধারণা বা কুসংস্কারকে লালন করে, যা আজকের যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
• গ্রাম সাহিত্য সাধারণত আঞ্চলিক ভাষায় রচিত, যা শহুরে পাঠকদের জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
"রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লোকসাহিত্য" গ্রন্থটি পর্যালোচনা করার এই মূল্যবান সুযোগ প্রদান করার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। প্রথমত, আমি কৃতজ্ঞ কবিগুরুর প্রতি, যাঁর বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা লোকসাহিত্যে এক নতুন দিশা নির্দেশ করেছে। তাঁর এই অসামান্য গ্রন্থটি আমাকে লোকসাহিত্যের আঙ্গিকে লুকানো সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের প্রতি গভীর আগ্রহী করে তুলেছে।
বিশেষভাবে, আমি কৃতজ্ঞ অধ্যাপিকা দেবলিনা দেবনাথের প্রতি, যিনি আমাকে যথাযথ নির্দেশনা এবং উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছেন। তাঁর আন্তরিক সহায়তা ও প্রেরণাশক্তি ছাড়া এই কাজটি সম্ভব হত না।
এছাড়া, আমি ধন্যবাদ জানাই সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাগার এবং অন্যান্য উৎসগুলোর প্রতি, যেখান থেকে আমি প্রয়োজনীয় তথ্য এবং উপকরণ সংগ্রহ করেছি। তাঁদের সহায়তার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ।
পরিশেষে, আমি আমার পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যাঁরা আমাকে সার্বিক সমর্থন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁদের উৎসাহ এবং ভালোবাসাই আমার এই পর্যালোচনা লেখার শক্তি এবং প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
__________________ __________________
শিক্ষিকার স্বাক্ষর বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality