![]() |
মজুলির সমগুড়ি সত্ৰ: যেখানে মুখোশ কথা বলে |

একটা দ্বীপ—চারদিকে শুধু জল, নৌকার ছলাৎ শব্দ, আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এক প্রাচীন সত্ৰ। নাম তার—সমগুড়ি সত্ৰ।
এখানে ঢুকলেই মনে হয়—শুধু চোখ নয়, মন দিয়ে দেখতে হয় এই জায়গাটাকে। কারণ এখানে মুখোশ কথা বলে।
মাজুলী — বিশ্বের বৃহত্তম নদীদ্বীপ। অসমের বুকে বয়ে চলা মহাবাহু ব্রহ্মপুত্ৰ নদীর মাঝখানে অবস্থিত এই অপূর্ব দ্বীপটি শুধু ভৌগোলিক দিক থেকে নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এক অপরিসীম ঐতিহ্যের ধারক।
🎭 মুখোশ নয়, যেন জীবন্ত চরিত্র!
প্রথম যেটা চোখে পড়ে, তা হলো—দেয়ালে সারি সারি রঙিন মুখোশ। কেউ হনুমান, কেউ রাবণ, কেউ গরুড়, আবার কেউ নারকাসুর।
কিন্তু এসব শুধু শিল্প নয়—প্রতিটা মুখোশ যেন নিজের একটা গল্প বলে। প্রতিটা মুখে যেমন রং, তেমনই অভিব্যক্তি।
কখনো ভয়, কখনো বীরত্ব, কখনো করুণা।
Samaguri Satra mask making tradition Majuli
👴🏼 এক বৃদ্ধ কারিগর নিপুণ হাতে মুখোশ গড়ছিলেন। বললেন,
"আমরা মুখোশ বানাই না… চরিত্র বানাই।"
এই একটা বাক্যে বোঝা যায়—এই শিল্প শুধুই পেশা নয়, এটা ভক্তি, ইতিহাস আর আত্মা মিশে এক বিশ্বাসের রূপ।
![]() |
ভাওনার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিল্পীরা |
🧵 কীভাবে তৈরি হয় এই মুখোশ?
এই মুখোশ শুধু দেখতে সুন্দর নয়, এদের তৈরির পদ্ধতিও চমকপ্রদ:
১.প্রথমে বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়।
২.তারপর মাটি ও কাপড় দিয়ে দেওয়া হয় মুখের অবয়ব।
৩.শুকিয়ে গেলে প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো হয়।
৪.👹কিছু মুখোশে চোখ, জিভ বা চোয়াল নড়াচড়া করে—যা নাটকে জীবন্ত অভিব্যক্তি এনে দেয়।
🎨 এই পুরো প্রক্রিয়াটাই একধরনের ধ্যান—কারিগরেরা যেন একেকজন শিল্পী ও সাধক একসঙ্গে।
![]() |
মুখোশ হাতে শিল্পী |
📖 শঙ্করদেবের আদর্শে গড়ে ওঠা এই শিল্প
আসামের মহান সংস্কারক শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ভক্তি আন্দোলনের সময় এই মুখোশনাট্য বা 'ভাওনা' প্রচলন করেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন—ভক্তির প্রচারে নাটক, সংগীত, শিল্প—সব কিছু দরকার।
সমগুড়ি সত্ৰ সেই বিশ্বাসকেই ধরে রেখেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
🎪 মুখোশ মঞ্চে জীবন্ত হয়ে ওঠে
ভাওনা নাটকে যখন এক শিল্পী হনুমানের মুখোশ পরে মঞ্চে ওঠেন, তখন সেটা শুধু এক দর্শন নয়—একটা অভিজ্ঞতা।
আপনার মনে হবে, যেন হনুমান নিজে উপস্থিত হয়েছেন সেই যুদ্ধে, সেই রামায়ণে।
![]() |
দশমুখী রাবণের মুখোশ |
🚲 আমার অভিজ্ঞতা – সাইকেলের চাকা ঘোরে, আর মন ছুঁয়ে যায়
আমি সাইকেল চালিয়ে পৌঁছেছিলাম এই সত্ৰে। দূর থেকে মনে হয়েছিল, এ তো একটা সাধারণ আশ্রম।
কিন্তু ভেতরে ঢুকে যখন মুখোশের ঘর দেখলাম, তখন যেন এক জীবন্ত জাদুঘরে ঢুকে পড়েছি।
📸 ছবির মধ্যে সেই মুহূর্তগুলো ধরা আছে—
১.শিল্পীর হাতে রং মাখানো হনুমান।
২.রাবণের দশমুখো মুখোশ হাতে পোজ দেওয়া।
৩.সূর্যোদয়ে কাঁধে মুখোশ নিয়ে মঞ্চে যাওয়ার প্রস্তুতি।
৪.প্রতিটা মুহূর্ত একটা ইতিহাস বয়ে আনছে।
📌 কেন যাবেন সমগুড়ি সত্ৰ?
🗺️ ভ্রমণ তথ্য:
মাজুলির সাথে কোন স্থল সেতু সংযোগ নেই, তাই দ্বীপের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নদীপথ। মূলত ফেরি পরিষেবার মাধ্যমেই যাত্রী ও যানবাহন মাজুলীতে যাতায়াত করে।
🛶যানবাহন সহ ফেরি পরিষেবা:
অসমের যোরহাট শহরের নিমাতিঘাট থেকে বিভিন্ন ঘাটে ফেরি পরিষেবা চালু আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘাটগুলি হলো—কমলাবাৰী, অফলামুখ, শালমৰা, ফুলনি, দক্ষিণপাট ও চুমৈবাৰী। এইসব ফেরি তে মানুষ ছাড়াও গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যও আনা-নেওয়া করা হয়।যোরহাট থেকে মাজুলী পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে, যার মধ্যে সড়কপথ ও নদীপথ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
🔹 বিকল্প পথ:
গুৱাহাটী থেকেও মাজুলী পৌঁছানো যায়। গুৱাহাটী থেকে লখিমপুৰ–ঢকুৱাখনা হয়ে নাইট বাসে সরাসরি মাজুলী যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই পথ মূলত উত্তর দিক থেকে দ্বীপে প্রবেশ করে।
🏡 থাকা: মজুলির হোমস্টে গুলিতে সহজেই থাকা যায়।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality