![]() |
🕉️ রাম্মান উৎসব হল উত্তরাখণ্ডের |


রাজু বিশ্বাস
ব্লগার | লেখক |ছাত্র
📍 ভারত (India)
Blue Tick Approval
এই উৎসব স্থানীয় দেবতা ভূমিয়াল দেবতা-র উদ্দেশ্যে পালিত হয়। উৎসবের সময় মুখোশধারী শিল্পীরা পৌরাণিক কাহিনি ও রামায়ণ-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন।
রামমান উৎসব: গাড়োয়াল অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী মুখোশধারী অনুষ্ঠান
🎭 মুখোশনৃত্য ও ধর্মীয় নাট্য অভিনয়
রাম্মান উৎসবে দেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য হিসেবে মুখোশধারী নৃত্য পরিবেশিত হয়, যা গ্রামবাসীদের মধ্যে এক গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে জনপ্রিয়। এই নৃত্যে রামের জীবনের নানা পর্ব—জনকপুরে তাঁর ভ্রমণ থেকে শুরু করে নির্বাসন এবং রাজ্যাভিষেকের কাহিনি—অভিনীত হয়।
স্থানীয় গানের সঙ্গে মাল নৃত্য, কুড়যোগী, এবং নরসিংহ পাত্তর নৃত্য পরিবেশিত হয়, যা লোকজনের জীবনযাত্রা, কষ্ট এবং সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে।
👀মোট ১৮ জন মুখোশধারী অভিনয়শিল্পী অংশ নেন ।
👀প্রতিটি নৃত্যে থাকে ১৮টি ছন্দ বা তালচক্র ।
👀নাচ, গান, জাগার (লোকভক্তিগীতি) ও নাট্যরূপে তুলে ধরা হয় পুরাণ ও ইতিহাস ।
রামমান উৎসব কোথায় পালিত হয়
🎶 উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান ও সংগীতের সংমিশ্রণ
রামমান উৎসব (বা রাম্মান) চলাকালীন গ্রামবাসীরা দেবতাকে শস্য ও অন্যান্য উপকরণ উৎসর্গ করেন এবং বিভিন্ন নৃত্য ও নাটক পরিবেশন করেন। উৎসবের এই অংশটি একটি মৌখিক ও পারম্পরিক রীতি, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এক গম্ভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রেরণা হিসেবে স্থানান্তরিত হয়ে আসছে।
Garhwal Ramman Festival
রামমান শুধুই বিনোদন নয়, এটি একটি সামাজিক বন্ধন।
👉 এখানে অংশগ্রহণ করেন ব্রাহ্মণ, রাজপুত, দাসসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ।
👉 পরিবেশিত হয় জাগার গান, যা পূর্বপুরুষদের স্মরণে গাওয়া হয়।
👉 এটি সামাজিক সমতার প্রতীক, যেখানে সবাই মিলেমিশে সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠেন।
![]() |
প্রথাগত র্যামায়না অভিনয় |
উৎসবের সময় :
রামমান উৎসব মূলত বৈশাখী মাসের শেষে পালিত হয়। এটি একদিকে যেমন একটি ফসল উৎসব, তেমনি হিন্দু সৌর নববর্ষের সূচনা হিসেবেও বিবেচিত হয়। এই উৎসবের মূল দেবতা হলেন ভূমিয়াল দেবতা (অর্থাৎ ভূমিচেত্রপাল বা ভূমির রক্ষাকর্তা)।
বৈশাখী পঞ্জিকা অনুযায়ী, গ্রাম্য পুরোহিত বৈশাখীর নবম অথবা একাদশ দিনে উৎসব পালনের তারিখ ঘোষণা করেন। সেই দিন থেকে শুরু হয় বহু প্রজন্মের ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
Ramman UNESCO heritage
📜 কেন এই উৎসব গুরুত্বপূ্র্ণ?
রামমান উৎসবের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব শুধুমাত্র স্থানীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত।
২০০৯ সালে, ইউনেস্কো রামমান উৎসবকে মানবতার অবহিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বমূলক তালিকায় (Representative List of the Intangible Cultural Heritage of Humanity) অন্তর্ভুক্ত করে।
এছাড়াও, ২০১৬ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে রামমান মহোৎসবের একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়, যা উত্তরাখণ্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে।
![]() |
রামমান উৎসব |
✅ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি প্রমাণ করে, রামমান শুধুই ভারতীয় সংস্কৃতির নয়, বরং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
✅ এটি স্থানীয় ঐতিহ্য, সামাজিক সংহতি ও লোকজ জ্ঞানচর্চার এক অনন্য উদাহরণ।
✅ তরুণ প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখতে রামমান উৎসব একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
📚 সূত্র:
Wikipedia Ramman Festival – বাংলা অনুবাদ
UNESCO Intangible Heritage List UNESCO Page
⚠️ বিলুপ্তির আশঙ্কা:
বিশ্বায়ন ও আধুনিকতার প্রভাবে রামমান উৎসবের ঐতিহ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীরা আজও তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান সংরক্ষণের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রামমান উৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয় — এটি একটি সম্প্রদায়ের ঐক্য, বিশ্বাস ও ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিফলন।
আজও এই উৎসব একটি জীবন্ত ঐতিহ্য হিসেবে টিকে আছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে রক্ষা করে চলেছে। তবে এই উৎসব বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি:
❌ তরুণ প্রজন্মের অনীহা ও দূরত্ব ।
❌ সরকারি সহায়তার অভাব ও উদাসীনতা ।
❌ লোকশিল্পীদের আর্থিক সংকট ও পেশাগত নিরাপত্তাহীনতা ।
এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে রামমান উৎসবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি।
🛡️ আমাদের দায়িত্ব: এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরা, চর্চা করা এবং সুরক্ষিত রাখা।
🔍 প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQs) – রামমান উৎসব নিয়ে বিস্তারিত
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality