![]() |
নাটমন্দির ,শ্রীঅদ্বৈত পাট |
শ্রীঅদ্বৈতাচার্য বৈষ্ণব ধর্মের এক বিশিষ্ট গুরু, যিনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবের অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হন। তাঁর জন্মস্থান ও তপস্যাস্থলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈষ্ণব তীর্থ – বাবলার শ্রীঅদ্বৈত পাট।
শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের জন্ম ও শিক্ষা
১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ৮৩৯ সাল) শ্রীহট্টের অন্তর্গত লাউড় পরগণার নবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীঅদ্বৈতাচার্য। তাঁর পিতা ছিলেন কুবের মিশ্র এবং মাতা লাভা দেবী। জন্মসূত্রে তিনি বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছিলেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি শান্তিপুরে এসে বেদ, স্মৃতিশাস্ত্র ও ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। শান্তিপুরের পূর্ণবাটী নিবাসী শান্ত বেদান্তবাগীশ এর নিকট বেদচতুষ্টয় অধ্যয়নের পর তিনি 'বেদ পঞ্চানন' ও 'অদ্বৈতাচার্য' উপাধি লাভ করেন।
![]() |
শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর চিত্রস্থান |
বাবলার শ্রীঅদ্বৈত পাট – বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র
শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের অন্যতম তপস্যাস্থল হল শান্তিপুরের বাবলা অঞ্চলে অবস্থিত শ্রীঅদ্বৈত পাট। এখানে তিনি কঠোর তপস্যা করে ভগবানের কৃপা লাভের জন্য আহ্বান জানান, যার ফলস্বরূপ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব ঘটে।
👉 বিশেষ তথ্য:
- এখানেই শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের আশীর্বাদে শচীমাতা শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে গর্ভে ধারণ করেন।
- গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের পর, তিনি দশ দিন এখানেই অবস্থান করেন এবং শচীমাতার হাতে আহার গ্রহণ করেন।
- মাধবেন্দ্র পুরী এখানেই শ্রীঅদ্বৈতাচার্যকে দীক্ষা প্রদান করেন।
- রাজা দিব্যসিংহ শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে 'লাউড়িয়া কৃষ্ণদাস' নামে পরিচিত হন।

শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও হরিদাস ঠাকুরের মন্দির

অদ্বৈত পাটের বর্তমান অবস্থা
প্রথমদিকে শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের জীবিতকালে গঙ্গা এই পবিত্র স্থানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। তবে কালক্রমে গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়, ফলে শান্তিপুরের অবস্থানও কিছুটা সরে যায়।
১৮ শতকের দিকে সাধু সীতানাথ দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাবলার শ্রীঅদ্বৈত পাট পুনঃসংস্কার করেন এবং এখানে মন্দির নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও তাঁর শিষ্যরা ১৯৪২ সালে (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ) বর্তমান পাকা দালান মন্দির নির্মাণ করেন।
![]() |
শ্রীচৈতন্য বিগ্রহ |
শ্রীঅদ্বৈত পাটে কী দেখতে পাবেন?
শান্তিপুরের বাবলা অঞ্চলে অবস্থিত শ্রীঅদ্বৈত পাট আজও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। এখানে দর্শনার্থীরা যা দেখতে পাবেন –
✅ শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের দারুমূর্তি, শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ ও শ্রীগোপালজিউ মূর্তি।
✅ মন্দিরের সামনের নাটমন্দির।
✅ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ও হরিদাস ঠাকুরের স্মৃতিমন্দির।
✅ তিন প্রভুর বিশ্রামস্থল – গৌর, নিতাই ও সীতানাথের মন্দির।
✅ শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরীর মন্দির।
![]() |
শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরির মন্দির ও তিন প্রভুর বিশ্রামস্থল |
🚆 রেলপথে যাত্রা:
- শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ট্রেন ধরতে হবে।
- শান্তিপুর স্টেশনে নেমে রিকশা বা টোটোতে শ্রীঅদ্বৈত পাট পৌঁছানো যাবে।
- কলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে সময় লাগে প্রায় ২.৫ ঘন্টা।
বিশেষ উৎসব ও দর্শন সময়
🎉 প্রধান উৎসব:
- মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর আবির্ভাব দিবস।
- দোলপূর্ণিমার পর সপ্তমী তিথিতে দোল উৎসব।
🕰️ দর্শনের সময়: প্রতিদিন সকাল ৬টা – রাত ৯টা
শেষ কথা
শান্তিপুরের বাবলা অঞ্চলের শ্রীঅদ্বৈত পাট শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বৈষ্ণব ঐতিহ্যের এক মহান নিদর্শন। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দির আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৈষ্ণব ভক্তদের জন্য এটি এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
আপনি যদি বৈষ্ণব দর্শনের অনুসারী হন বা বাংলার প্রাচীন ইতিহাস জানতে চান, তাহলে একদিন সময় নিয়ে শ্রীঅদ্বৈত পাট ভ্রমণ করতে পারেন।
📌 আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! আপনি কি কখনো শান্তিপুরের শ্রীঅদ্বৈত পাট পরিদর্শন করেছেন? কমেন্টে জানান! 😊
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality