![]() |
তেলকুপী, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা |
তেলকুপী: পুরুলিয়ার হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের সাক্ষী
তেলকুপী, পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের অন্তর্গত একটি গ্রাম, যা একসময় ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। তবে ১৯৫৭ সালে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বাঁধ নির্মাণের ফলে দামোদর নদীর জলমগ্ন হয়ে যায় এই গ্রামটি। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র একটি প্রত্নস্থল, যেখানে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আজও ইতিহাসের কাহিনি বলে চলে।
তেলকুপীর ভৌগোলিক অবস্থান
- অবস্থান: পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৪৭ কিমি দূরে।
- নিকটবর্তী গ্রাম: লালপুর, গুরুন্ডি, তারাপুর, জামডি, পাথরবিড়া, ঘরবিড়া।
- ইতিহাস: ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এটি বিহারের মানভূম জেলার অংশ ছিল।
তেলকুপীর ইতিহাস
তেলকুপীর মন্দিরসমূহের কথা প্রথম পাওয়া যায় ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত জে. ডি. বেগলারের “Report of A Tour through the Bengal Provinces” বইতে। তিনি তেলকুপীতে ১৩ থেকে ২২টি মন্দিরের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। মন্দিরগুলোর নির্মাণশৈলী এবং ভাস্কর্যগুলি অত্যন্ত উঁচুমানের ছিল। মন্দিরগুলো তিন ভাগে বিভক্ত ছিল:
- উত্তর দিকে: নদীর কাছে অবস্থিত।
- গ্রামের পশ্চিম দিকে: কিছুটা দূরে।
- গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে।
এই মন্দিরগুলোর গর্ভগৃহে শিব, বিষ্ণু এবং গজলক্ষ্মীর মতো দেব-দেবীর মূর্তি ছিল। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ক্ষুদ্র ভাস্কর্য দ্বারা সজ্জিত ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি
আজ তেলকুপীর অধিকাংশ মন্দির জলের তলায়। তবে কিছু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনো দৃশ্যমান। এই স্থানটি একটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
তেলকুপীতে কীভাবে পৌঁছাবেন?
- অবস্থান: তেলকুপী, পুরুলিয়া শহর থেকে ৪৭ কিমি দূরে।
- থাকার ব্যবস্থা: গ্রামে কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই রঘুনাথপুর বা বরন্তী অঞ্চলে থেকে যেতে পারেন।
- খাবার: গ্রামে কোনো বড় খাবারের দোকান নেই। ১.৫ কিমি দূরে একটি ছোট দোকানে মুড়ি, চপ, ঘুগনি, এবং চা পাওয়া যায়।
দর্শনীয় স্থান এবং অভিজ্ঞতা
- প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।
- পরিযায়ী পাখিদের দেখা।
- স্থানীয় ড্যাম থেকে সদ্য তোলা চিংড়ি মাছ কেনা।
- হাতা টান নৌকা করে শীতের রোদ উপভোগ।
ভ্রমণকারীদের জন্য পরামর্শ
তেলকুপীতে বেড়াতে গেলে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বে আগ্রহ নিয়ে যান। পিকনিক মুডে না গিয়ে, প্রাচীন এই প্রত্নস্থলের প্রতি সম্মান দেখান। স্কুবা ডাইভিংয়ের মাধ্যমে ডুবে যাওয়া মন্দির ও সভ্যতাকে পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হলে, এই স্থানটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
তেলকুপীর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তেলকুপীর মন্দির ও ধ্বংসাবশেষ যদি স্কুবা ডাইভিং বা প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়, তাহলে এটি দেশের অন্যতম পর্যটনস্থল হয়ে উঠতে পারে। সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এই হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার গুরুত্ব নতুন করে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সম্ভব।
তেলকুপী, সত্যিকারের এক "হিডেন জেম"। ইতিহাস, প্রকৃতি এবং প্রত্নতত্ত্বের মেলবন্ধন খুঁজতে সময় বের করে ঘুরে আসুন এই বিস্ময়কর স্থানে।
We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality