রানাঘাট নিস্তারিণী মন্দিরের অজানা কাহিনি ও ঐতিহ্য Nistarini Kali Temples, Ranaghat, Nadia

রানাঘাট নিস্তারিণী মন্দিরের অজানা কাহিনি ও ঐতিহ্য Nistarini Kali Temples, Ranaghat, Nadia

Raju Biswas
0

ranaghat-nistarini-mandir.jpg

সামনের দিক থেকে মন্দিরটি দেখতে এই রকম।

রানাঘাট নিস্তারিণী মন্দির

 রানাঘাট শহরের বড়বাজার এলাকায় অবস্থিত নিস্তারিণী মন্দিরটি সাদামাটা হলেও কিন্তু, ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে ।এই মন্দিরটি দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠার ২০ বছর আগে নির্মিত হয়।কথিত আছে যে, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরটি রানাঘাটের নিস্তারিণী মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছিল।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
বলির হাড়িকাঠ।

 রানাঘাটের ঐতিহ্য

নিস্তারিণী মন্দিরের অবস্থান ও পরিবেশ:  নিস্তারিণী মন্দিরের ডানপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে চূর্নী নদী। বামপাশে বড়বাজারে যাওয়ার রাস্তা(পি. সি. স্ট্রীট)। নিস্তারণী কালীর মন্দিরটি পালচৌধুরী জমিদার বাড়ির কাছে অবস্থিত। মন্দিরটি উঁচু বেদির বা ভিতের উপর স্থাপিত এবং নবরত্ন শৈলীর। মন্দিরের গর্ভগৃহে নিস্তারিণী কালী নিত্য পূজিতা।একপাশে গৃহ দেবতা ও শিবের পূজা হয়। মন্দিরের দেওয়ালে সুন্দর পঙ্খের কাজ রয়েছে এবং সিঁড়ির দুপাশে দুটি সিংহের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের সামনে একটি পশুবায়র হাড়িকাঠ আছে, তবে এখন বলি হয় না। মন্দিরটি চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রবেশপথ গৃহে প্রবেশের মতো কাঠের দরজা রয়েছে।
ranaghat-nistarini-mandir.jpg
মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার।

ঠিকানা:-পি. সি. স্ট্রীট, ২৪, রানাঘাট রোড,  
রানাঘাট, পশ্চিমবঙ্গ - ৭৪১২০১, ভারত।

ইতিহাসের পটভূমি: একসময় এই চূর্নী নদীই ছিল কলকাতা এবং কৃষ্ণনগরের যোগাযোগের প্রধান পথ।রানি রাসমনি ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন।মন্দির কেমন হবে তা নিয়ে বিস্তর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তার নিকট আত্মীয়দের সঙ্গেও পরামর্শ করছিলেন।সবার যুক্তি অনুযায়ী তৈরি হচ্ছিল নানা নকশা, তবে মনের মতন হচ্ছিলো না।চিন্তা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

সেই সময় একদিন এই নদীপথে রানী রাসমনির জামাই মথুর বিশ্বাস  কৃষ্ণনগরে যাচ্ছিলেন। লোকমুখে শোনা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নৌকা ঘাটে ভিড়ানো হয়। তাঁর নজরে পড়ে এই মন্দিরটি। মথুরবাবু এই মন্দিরের কাছে  আসেন এবং খুব মনোযোগ দিয়ে মন্দিরটি দেখেন।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
রানাঘাট স্টেশন থেকে যাওয়ার জন্য গুগল ম্যাপ দেওয়া হল।

 তিনি ফিরে গিয়ে রাসমনিকে এই মন্দিরের কথা জানান। এবং তার পরে কলকাতা থেকে মিস্ত্রি নিয়ে আসা হয়েছিল এই মন্দির দেখার জন্য। মিস্ত্রিরা ফিরে গিয়ে এই মন্দিরের আদলেই দক্ষিণেশ্বরের মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
মন্দিরের দেওয়ালে পঙ্খের কাজ এবং সিংহ ও কাকাতুয়া জাতীয় ভাস্কর্য।

 নিস্তারিণী মন্দিরের ইতিহাস

নির্মাণের ইতিহাস:রানাঘাটের জমিদার পালচৌধুরী, তাদেরই বংশধর জমিদার রতন চন্দ্র পালচৌধুরী। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। জমিদার রতন পালচৌধুরী পরলোকে যাওয়ার পর, এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন ও মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাত্রী উজ্জ্বলমণি দাসী ,স্বর্গীয়  রতন চন্দ্র পালচৌধুরী স্ত্রী। সেই সময় এই মন্দির তৈরি করাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।মন্দির নির্মাণে সময় লেগেছিল ৯ বছর। 

১৭৫৭ শকাব্দ, ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১২৪২ বঙ্গাব্দ, ইংরেজি ১৫ই জুন, ১৮৩৫ সালের সোমবার প্রতিষ্ঠিত হয় এই মন্দির। মন্দিরের নাম 'শ্রীশ্রী নিস্তারিণী কালী মাতার মন্দির'।মন্দির প্রতিষ্ঠাত্রী উজ্জ্বলমণি দাসী (স্বামী রতন চন্দ্র পালচৌধুরী)।

 

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
দেওয়ালে রয়েছে পঙ্খের কাজ

 ১২৪২ বঙ্গাব্দে, জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তির দিন এই মন্দিরের দ্বারোগ্ধারণ হয়েছিল।  প্রতি বছর ওই দিনটিতে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়। নিচে বংশতালিকার ফলকের ছবি দেওয়া হলো।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg

মন্দিরের দেখভাল:  উজ্জ্বলমুনি দাসী কোনো সন্তান না থাকায়, এই মন্দিরের দায়িত্ব তাঁর ভাসুর এবং দেওয়রের ছেলেদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে তাদের পরিবারের ছেলেরা এই পুজো করে আসছে।বর্তমানে এই মন্দিরের দেখভাল করেন অলোকেন্দু পালচৌধুরী, অমিতেন্দু পালচৌধুরী এবং অর্ঘেন্দু পালচৌধুরী।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
নিস্তারণী কালী দেবীর বিগ্রহ।

   অর্ঘেন্দু বাবু জানান,১৭৫ বছর পূর্তী উপলক্ষে মন্দির সংস্কার করা হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে এই মন্দির সংস্কার করতে। সেই সময় মায়ের মূর্তিতে রং করা হয়।তিনি আরও জানান, শিল্পীর কাছ থেকে শোনা গেছে যে, একটি পাথর কেটেই কালী এবং শিবের মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।

ranaghat-nistarini-mandir.jpg
শিবলিঙ্গ।
যাতায়াতের ব্যবস্থা: রাজধানী কলকাতা থেকে রানাঘাট যাওয়ার বিস্তারিত দেওয়া হলো।ট্রেন ও সড়কপথে রানাঘাটে পৌঁছানো যায়। শিয়ালদহ থেকে এক্সপ্রেস ট্রেন, লালগোলা প্যাসেঞ্জার, রানাঘাট, শান্তিপুর, গেদে বা কৃষ্ণনগর লোকালে পৌঁছানো যায়। দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার। রানাঘাটে প্ল্যাটফর্মে (নং ১, ৫, ৬) নামার পর পায়ে হেঁটে (১০ থেকে ১৫ মিনিট)।
টোটোতে বা রিকশায় মন্দিরে পৌঁছানো ৫ থেকে ৭ মিনিটেই। 
এছাড়া ১২ নং জাতীয় সড়ক ধরেও রানাঘাটে পৌঁছানো যায়।বাস থেকে নামতে হবে রানাঘাট প্রামাণিক মোড়ে। সেখান থেকে টোটো বা পায়ে হেঁটে যেতে পারেন।
ranaghat-station.jpg
রানাঘাট স্টেশন যাওয়ার নির্দেশিকার জন্য ক্লিক করুন।   







Spytok ট্যাগ

ট্যাগসমূহ

#রানাঘাট
#নিস্তরিণীমন্দির
#বাংলারঐতিহ্য
#ধর্মীয়উৎসব
#লোককাহিনী

Post a Comment

0Comments

We welcome thoughtful discussions. Comments are moderated for quality

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!